বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের বিনা পয়সায় পড়াচ্ছেন রাবি শিক্ষার্থী


হোসাইন মোহাম্মদ সাজ্জাদ, রাবি:
কিছুদিন আগেই শেষ হয়ে গেল ২০১৯ সালের এইচএসসি পরিক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোচিং ভর্তি হয়েছেন। গরীব অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কোচিংয়ে ভর্তি হতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন তাদের ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তাদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে এসেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আরেফিন মেহেদি হাসান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়ছেন। তার এ কার্যক্রমে সহযোগিতা করছেন রাবির আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিনা পয়সায় মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিরিন আহমেদ। তার বাড়ি রাজশাহী জেলার মতিহার থানা অন্তর্গত কাজলা এলাকায়। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কি করবো, কোন কোচিং ভর্তি হবো? আদেও কোন কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া হবে কিনা। আমার পরিচিত এক ভাইয়ের কাছে শোনার পরে আরেফিন ভাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করি। কেমন ক্লাস করাই তা দেখার জন্য প্রথম দিন ক্লাস করি। ক্লাস করে অনেক ভাল লাগায় এখন নিয়মিত ক্লাস করছি। ক্লাস নিতে কোন ত্রুটি নাই। বিনা পয়সায় বলে ভাইয়া কম পড়ান এমনটা না। ভাইয়া অনেক ভালভাবে পড়ান। আশা করি ভাইয়া যেগুলো পড়ান সেগুলো পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যাব।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু আরেক শিক্ষার্থী মো. রুম্মান আলী বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব ছিল না। হঠাৎ একদিন কাজলায় একটা পোস্টার চোখে পড়ল। পোস্টার দেখার পরে ভাইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করি। ভাইয়া আমাকে আসতে বললেন। তারপর থেকে নিয়মিত ক্লাস করছি। ভাইয়া অনেক ভালো ক্লাস নিচ্ছেন। কোন কোচিংয়ে টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে যে সুযোগ সুবিধাগুলো পাবো। এখানে এসে ফ্রি তে সেগুলো পাচ্ছি।’

এমন মহৎ কাজে এগিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে আরেফিন মেহেদি হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাস ছুটি থাকায় আমি বাসায় ছিলাম। হুট করে আমার মাথায় আসলো আমি তো বিনা পয়সায় গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারি। আমি যদি এটা করতে পারি তাহলে শিক্ষার্থীরা অনেক লাভবান হবে। সুপ্রতিষ্ঠিত কোন কোচিংয়ে ভর্তি হতে ১০-১১ হাজার টাকার প্রয়োজন। আসলে গরীব কোন শিক্ষার্থীর পক্ষে এত টাকা জোগাড় করে কোচিংয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব না।

ভর্তি হতে না পারার কারণে ভাল ছাত্র-ছাত্রীগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসতে পারছে না। তারা দেশের সেবায় কাজ করতে পারছে না। এরকম চিন্তা-ভাবনা থেকেই মূলত এগিয়ে আসা। আমরা ২৩ তারিখ থেকে এ কার্যক্রমের অগ্রযাত্রা শুরু করি। প্রথমদিন মাত্র ৩ জন দিয়ে আমরা ক্লাস শুরু করি। আল্লাহ রহমতে এখন ১৫ জন শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। এটা যদি শিক্ষার্থীরা জানতে পারে তাহলে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়বে আমি আশাবাদী।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের একটা সমস্যা হলো চক্ষুলজ্জা, আত্মসম্মানবোধ একটু বেশি। আমাদের মধ্যে ইগো বেশি থাকার কারণে অনেক সমস্যায় থাকার পরেও কাউকে কিছু বলতে চাই না। আমি সেই জায়গা থেকে এগিয়ে এসেছি। আমি চাই যারা সমস্যায় আছেন তারা যেন কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই ক্লাস করতে আসেন। আমাদের এই সুযোগ সুবিধাগুলো নিয়ে থাকেন। বর্তমানে আমি যে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করছি। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরে আমার মত তারাও অন্যদের সাহায্য করবে।

যখন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা ছড়িয়ে পড়বে তখন আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে কোন শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়বে না। শিক্ষার ক্ষেত্রে আর্থিক অস্বচ্ছলতা কোন প্রতিবন্ধকতা বা অন্তরায় হয়ে দাড়াবে না। অর্থ সংকটের কারণে আমি কোন ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারছি না সেটা যেন না হয়। শিক্ষা প্রতিটি মানুষের দ্বারপ্রান্তে পৌছিয়ে দিতে চাই। কেউ যেন অশিক্ষিত না থাকে । আমি চাই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠুক। দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে উদ্বাত্ত্ব আহ্বান থাকবে তারা যেন তাদের পাড়া মহলার যে শিক্ষার্থীটা পড়াশোনা করতে পারছে না তাদের পাশে দাড়ায়। তাহলে আমরা বুকে যে সোনার বাংলা ধারণ করি তা একদিন গড়তে সক্ষম হবো।’

আমার দিকে অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য ছুড়তে পারেন। তাদের উদ্দেশ্য আরেফিন বলেন, ‘অনেকেই বলতে পারেন আমি কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এটা করছি কিনা। আমি তাদের উদ্দেশ্য বলছি। আমি কোন ধরনের উদ্দেশ্য নিয়ে এ কাজ করছি না। আমরা পুরোটাই স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে কাজটা করছি। কোন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের শিট কপি করতে যা খরচ হয় তা তারা নিজ হাতে দেয়।’

ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে আরেফিন বলেন, ‘এই বছর আমরা যাত্রা শুরু করেছি। চিন্তা-ভাবনা আছে এটাকে একটা সংগঠন হিসেবে দাড় করানো। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার পরেও যেন আর্থিক অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীরা এখান থেকে সুবিধা নিতে পারে। আমি চাই আজীবন এটা চালু থাকুক। এই সংগঠনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষার্থী বান্ধব কার্যক্রম করবো। আমাদের বর্তমান কার্যক্রম নবম শ্রেনী থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষার প্রস্তুতি পর্যন্ত। ভবিষ্যতে একদম রুট লেভেল থেকে এ কার্যক্রম চালু করবো। যদি কোন আর্থিক সাহায্য পায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরিক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য যারা গাড়ি ভাড়া জোগাড় করতে পারছে না তাদের আমরা সাহায্য করবো।’

এই কার্যক্রমে আরও সহযোগিতা করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রবিদুল ইসালাম, আসাদুজ্জামান নয়ন ও উত্তম কুমার পাল। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী। কেউ পড়তে চাইলে নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন-

আরেফিন মেহেদি হাসান
ফোন নম্বর: ০১৯৪৩-১৮৬৬৫০


শর্টলিংকঃ