ত্রিশ বছর ধরে বিড়াল নিয়েই সংসার আলেপার


কলিট তালুকদার, পাবনা :

আলেপা কারো কাছে বিড়ালপ্রেমিক আবার কারো কাছে পরিচিত ‘বিড়াল মা’ হিসেবে। কারণ তার বাড়িতে রয়েছে ৪২টি বিড়াল। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে বিড়ালের প্রতি তার ভালবাসা। নিজের সব আয়ের টাকাই খরচ করে যাচ্ছেন বিড়ালগুলোর জন্য।  কিন্তু এভাবে আর কতদিন! তাই বিড়ালগুলো রক্ষায় আর্থিক সহায়তা চান তিনি।

বাড়িতে প্রবেশ করতেই  চোখ আটকে গেল দলবেঁধে বিড়ালগুলোর ছুটে আসা দেখে!  আলেপার মধুর ডাক শুনেই দৌড়ে এলো খেতে।  আলেপাও সযত্নে একেকজনের জন্য আলাদা প্লেটে  সাজিয়ে রেখেছিলে মাছ-ভাত।  আলেপা জানান, প্রতিদিন আড়াই কেজি চালের ভাত আর সাথে ৯০ থেকে ১’শ টাকার মাছ লাগে এসব বিড়ালের জন্য। দিনে ৫/৬ বার খাওয়ার দিতে হয়। আমার ঘরেই ওরা থাকে। খাটে ও মেঝেতে বিছানা দিই। মশারি টাঙ্গায়া দিই। ছোটবেলা থেকেই আমি এসব ভালোবাসি। এদের জন্যি ভীষণ মায়া হয়। বিড়ালগুলোর অসুখ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হয়, আবার ওষুধ কেনা লাগে। শীতের মধ্যে বেশি কষ্ট হয়। ওদের জন্য একটা ঘর হলে ভালো হয়, কিন্তু টাকা পাবো  কোথায়! ওদের খাওয়াবো, নাকি ঘর বানাবো। এখন বিড়ালের সংখ্যা বাচ্চাসহ ৪২টা।

চাটমোহর পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত নারী কাউন্সিলর আলেপা খাতুন। তিনি কারো কাছে বিড়াল প্রেমিক আবার কারো কাছে পরিচিত ‘বিড়াল মা’ হিসেবে। কারণ তার বাড়িতে রয়েছে একটি বা দু’টি নয়, ৪২টি বিড়াল। প্রায় ৩০ বছর ধরে চলছে বিড়ালের প্রতি আলেপা খাতুনের ভালবাসার এই অনন্য নজির। বিড়ালকে ভালবেসে কিছুই করতে পারেননি জীবনে, এ নিয়ে আক্ষেপও নেই তার। শুধু চাইলেন, বিড়ালের খাবার যোগাতে প্রশাসনের আর্থিক সহায়তা।

পাবনার চাটমোহর পৌরসভার ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনের পরপর দু’বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর আলেপা খাতুন (৪২)। পোশাক পরিধানে অতি সাধারণ। বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া দুই শতক জায়গার উপর কুঁড়ে ঘরে ছেলেকে নিয়ে বসবাস। ভোর থেকেই শুরু হয় তার কর্মব্যস্ততা। এ কর্মব্যস্ততা একটু অন্যরকম! তার ভালবাসার সাথি যে ৪২টি বিড়াল।

বর্তমান সমাজে মানুষের মধ্যে যেখানে নিজে ভালো থাকার প্রবণতা বেশি, সেখানে আলেপার প্রাণিপ্রেম দেখলে যে কেউ হতবাক হবেন। সংসারে আর্থিক অবস্থা  কোনো রকমে চলার মতো। তবে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসাবে যে সম্মনী পান তার পুরো টাকাই খরচ করে ৪২টি বিড়ালের পেছনে। তাপরও শুধু সম্মানীর টাকা দিয়েই বিড়ালগুলোর খাবারের টাকার যোগান চলে না।  তাই হাত পাততে হয় আত্মীয়-স্বজনদের কাছেও।

স্বামী-সন্তানদের কথা জিজ্ঞেস করতেই আবেগী হয়ে ওঠেন আলেপা খাতুন। তিনি বলেন, ‘বাপ-মা ছোট বয়সে বিয়ে দিয়েছিল। সংসার কি বুঝতে পারিনাই। ২৬ বছর আগে সন্তান মহরম গর্ভে থাকতে স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে যায়। অনেক কষ্টে ছেলে মহরমকে মানুষ করেছি। ছেলে এখন রাজমিস্ত্রী। কিছুদিন আগে ছেলেকে বিয়ে দিয়েছি। সবাই আমাক ভালোবাসে। মানুষ টাকা খরচ করে আমাকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। মানুষের ভোটে কাউন্সিলর হয়েছি। প্রতিদিন এলাকার মানুষদের কাছে যাই খোঁজ-খবর নেয়।

পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রনি রায় বলেন, আলেপা আপার  প্রাণিপ্রেম দেখে আমরা মুগ্ধ। অনেক কষ্টে চলে তার সংসার। কিন্তু কোন সময় কাউকে তিনি তা বুঝতে দেন না। বিড়ালগুলোই তার সবকিছু।

আর চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার বলেন, আমি তার বাড়িতে গিয়েছি। তার সমস্যা গুলো আমি শুনেছি। তার বিড়াল গুলোর জন্য একটি ঘর তৈরীসহ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।


শর্টলিংকঃ