বেছে বেছে নিজ ভোটারদেরই ত্রাণ দিচ্ছেন নাচোল পৌর মেয়র


অলিউল হক ডলার, নাচোল :

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে সরকারি ত্রাণ বিতরণে গুরুতর অনিময় ধরা পড়েছে। দরিদ্র ও কর্মহীনদের এই ত্রাণ দেয়া কথা থাকলেও বাস্তবে দেয়া হচ্ছে স্বচ্ছ্বল পরিবারগুলোকে। চাকরি করেন-এমন ব্যক্তিও পেয়েছেন ত্রাণ।  দেয়া হয়েছে একই পরিবারের একাধিক সদস্যকেও। ত্রাণ বঞ্চিত মানুষের অভিযোগ,  পৌর মেয়র  নিজের ভোটারদের বেছে বেছে ত্রাণ দিচ্ছেন।  তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, সরকারি ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে ছাড় দেয়া হবে না

জানা গেছে,  ত্রাণ ও দূর্যোগ মন্ত্রালয়ের উদ্যোগে এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর আওতায় নাচোল পৌরসভায় প্রথমে ৫ মে.টন চাল, ২য় ধাপে ৯ মে. টন এবং ৩য় ধাপে ১৪ মে. টন চাল  করোনা কর্মহীনদের মাঝেবিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।

গত ১৬ এপ্রিল নাচোল পৌরসভায় ৬নং ওয়ার্ডে দক্ষিণ সাঁকোপাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে এনামুল হক ও মোশারফ মাস্টারের হাতে ১০ কেজি চাল ২ কেজি আলু, এক কেজি ডাল দিয়ে এ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন  পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ খান ঝালু। কিন্তু পৌর  মেয়র স্বাক্ষরিত ত্রাণ বিতরণের তালিকায় এনামুল হকের নাম রয়েছে ৩৬ নম্বরে ও মোশারফ মাস্টারের  সিরিয়াল নম্বর ৩৭। স্থানীয়রা জানিয়েছেন,  মোশারফ হোসেন গোমস্তাপুর এলাকার জালিবাগান মাদ্রাসায় সহকারি শিক্ষক। অন্যদিকে তাঁর ভাই এনামুল হকেরও আর্থিক অবস্থা সচ্ছ্বল। দক্ষিণ সাঁকোপাড়ায় ফ্লাট বাড়ি রয়েছে। নিজস্ব জমি জায়গা রয়েছে। অথচও তিনি পেয়েছেন ত্রাণ। অভিযোগ উঠেছে, এলাকার অনেক গরীব অসহায় ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে ত্রাণ দেয়া হয়েছে সচ্ছ্বলদের।

অন্যদিকে একই এলাকার একই পরিবারের ছয়জন সদস্যকে ত্রাণ দেয়া হয়েছে। এরা হলো- তামিজুলের ছেলে শামসুল, নজু, মুনিরুল ইসলাম, শফিকুল, রফিকুল ও রকি।  একই চিত্র পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডেও। ত্রাণ বিতরণের তালিকায় দেখা যায়, একই পরিবারের ছয়জন ত্রাণ  পেয়েছে। নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিন, আব্দুস সালাম, সাইফুউদ্দিন, রবিউল, শফিকুল, রফিকুল এই তালিকায় আছে।

বিতরণের তালিকায়  ১০২হতে ১০৭ পর্যন্ত তাদের নাম রয়েছে। এই ওয়ার্ডে একই তালিকায়  দু’বার চাল  সাজেমান নামে একব্যক্তি।  কিন্তু সাজেমান বলছেন, এ তিনি চাল পেয়েছে একবারই। বাদল একবার ত্রাণ পেলেও  একই তালিকায় তার নাম দুবার রয়েছে।  এরকম একাধিক  নাম থাকা  সিরিয়াল নম্বরগুলো হলো- ৫০,৩৯৩,৮৬,৩৯৬,১২১ ও ৪০০ । তবে এরা সবাই বলছেন, তারা ত্রাণ পেয়েছে একটি সিরিয়ালে একবারই।  একই অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড,৭নং ওয়ার্ডেও।

পৌর এলাকার শ্রীরামপুর এলাকার মৃত আব্দুল হকের ছেলে আলতাব হোসেনের কোনো আয় রোজগার নেই।তিনি এখনো ত্রাণ পান নি।  তার অভিযোগ,যাদের ফ্লাট বাড়ি,নিজস্ব জমি রয়েছে তারাই  পাচ্ছে সরকারি সহায়তা। পৌর এলাকার জয়নালের ছেলে মাজেদ। তিনি একজন অটো চালক।নিয়ম অনুযায়ী সে সরকারি ত্রান পাওয়ার কথা।  কিন্তু পান নি বলে জানিয়েছেন। ত্রাণ বঞ্চিত মানুষের অভিযোগ,  পৌর মেয়র  নিজের ভোটার বেছে বেশির ভাগ তালিকা করে তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন ঝালুর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে নাচোল উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা সুলতানা জানান, পৌরসভায় সরকারি ত্রাণ বিতরণে যাদের একাধিক নাম রয়েছে ইতোমধ্যে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।এছাড়া,  অনিয়ম হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) একেএম তাজকির-উজ-জামান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,  ত্রাণ বিতরণের সুনির্দিষ্ট  অভিযোগ পেলে  তদন্ত করে দেখা হবে।

 


শর্টলিংকঃ