ভবঘুরে প্রতিবন্ধীদের পেট চলছে এসপির রান্না করা খাবারে


নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহীর শিমলা পার্ক এর রাস্তার ধারেই সারাদিন বসে থাকেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শহিজান। বয়স প্রায় ৬০ বছর‌‌। চেহারার দিকে তাকালে বুঝতে দেরি হয় না, দারিদ্র্যতা কী রকম আষ্টেপিষ্টে ঘিরে ধরেছে তাকে। ঠিক নেই পরনের কাপড়। উস্কোখুস্কো চুল। আচরণে ভবঘুরে। কিন্তু এই বৃদ্ধার দিকে যেন নজর নেই কারোরই। তবে প্রতিদিন এই বৃদ্ধার জন্য রান্না করা খাবার ও পানির বোতল পৌঁছে দেন রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার

শহীজানের মত এরকম প্রায় ৫০ জন ভবঘুরে মানসিক প্রতিবন্ধীদেরকে এক মাস ধরে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। জানা গেছে, নগরীর কোর্ট এলাকা থেকে লক্ষীপুর সাহেববাজার হয়ে বিনোদপুর পর্যন্ত এরকম ৫০ জন ক্ষুধার্ত মানুষকে প্রতিদিন খাবার পৌঁছে দেন তিনি। যে যেখানে থাকে সেখানেই গাড়িতে করে খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দেয়া হয়। খাবারের তালিকায় থাকে ভাতের সাথে কোনদিন মাছ, কোনদিন মাংস, আবার কোনদিন ডিম। কখনো বা সবজি। সপ্তাহের ৭দিনই রুটিন মেনে চলছে এই কাজ।

প্যাকেটজাত খাবার আর পানির বোতল পেয়ে আবেগে আপ্লুত অন্ধ ভিক্ষুক আব্দুল করিম। তিনি বলেন, আমি জানিনা বাবা কে এই খাবার প্রতিদিন দেয়। জিজ্ঞাসা করলে বলে আমরা পুলিশ। মাঝেমধ্যে ভয় লাগে তাও বিকেল হলে আমি এখানে আসি খাবার নেওয়ার জন্য।

নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়ে এমন খাবার পাওয়া কয়েকজন ভিক্ষুকের সাথে কথা বলে জানা যায়। প্রতিদিন তারা এক প্যাকেট খাবার আর এক বোতল পানি পান।প্যাকেটে কোন দিন ভাতের সাথে ডিম সবজি ডাল, আবার কোনদিন মাছ অথবা মাংস সাথে ডাল সবজি। বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের আয় রোজগার নেই বললেই চলে। অনেক দিন যাচ্ছে অনাহারে অথবা অর্ধাহারে। তবে প্রতিদিন এখানে খাবার পাওয়াতে এক বেলার খাবারের নিশ্চয়তা মিলেছে তাদের।

খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ঝড়-বৃষ্টি বা প্রতিকূল আবহাওয়াতেও এই খাবারগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় জায়গায় পৌঁছে দেন।

তারা বলেন, আমরা আগ্রহভরে কাজটি করছি। খাবারের প্যাকেট মানুষগুলোর হাতে পৌঁছে দেওয়ার পরে তাদের চোখ মুখে প্রশান্তির যে আভা দেখতে পাই সেটা কোথাও মেলে না।

পুলিশের এমন মানবিক কাজে অবাক ওইসব এলাকার বাসিন্দারা। নগরীর শিমলা পার্ক এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হক নান্টু জানান, আমরা পুলিশকে সাধারণত আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করার কাজ করতে দেখে অভ্যস্ত। এরকম কাজ এর আগে কখনো চোখে পড়েনি। আমরা জানিও না কে এই খাবার দিচ্ছেন। প্রতিদিন বিকেলে দুই জন পুলিশ সদস্য এসে উপস্থিত ভিক্ষুকদের খাবার দিয়ে যান।

তিনি আরও, বলেন এই করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ যখন নিজের বাবা-মা ও আপনজনদেরকে ফেলে পালাচ্ছে ঠিক এই সময় পুলিশের এমন কাজ আমাদেরকে পুলিশকে নতুন করে চেনাচ্ছে। আমি আশা করি আগামী দিনগুলোতে এমন মানবিক পুলিশ দেখতে পাবো আমরা।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো: শহিদুল্লাহ ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ- কে জানান, ছিন্নমূল প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষগুলোর খাবারের কষ্ট শুধু তারাই বোঝে যারা তাদের আশেপাশে গিয়েছেন। আর এই করোনা পরিস্থিতিতে তারা আরো অসহায় হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষুধার্ত মানুষের খোঁজ রাখে না কেউ। ভিক্ষার টাকাতে কিনে খেতেও পারে না। কারণ হোটেল বন্ধ। তাই আমি ব্যক্তিগত অর্থে প্রতিদিন ৫০ জন অন্ধ বধির ও প্রতিবন্ধীদের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন আমাদের কয়েকজন সদস্য।

আগামীতে ছিন্নমূল প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার এই পরিধি আরো বাড়ানোর চেষ্টা করবেন বলেও জানান পুলিশ সুপার।


শর্টলিংকঃ