‘ভাইরাস’ থেকে ‘ভাইরাল’


ইউএনভি ডেস্ক:

‘ভাইরাল’ হল ইংরেজি ‘ভাইরাস’ শব্দটির বিশেষণ পদ। ভাইরাস ও ভাইরাল দুটি বিষয়েরই ভালো ও মন্দ দিক রয়েছে। খারাপ ভাইরাস যেমন মানবদেহে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে শরীরকে দুর্বল করে দেয়, তেমনি কিছু ভাইরালও মানবজীবনকে অসুস্থ করে তোলে।


বর্তমান পৃথিবীতে ভাইরাস ও ভাইরাল সমান গতিতে মানবজীবনে ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু মানুষ যাচ্ছেতাই কনটেন্ট, ভিডিও, লেখা ও ছবির মাধ্যমে নিজেকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে।

তথাকথিত সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষও যুক্ত হচ্ছে এ ভাইরাল দুনিয়ায়। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই যুগকে অনেকে ‘ভাইরাল’ যুগ বলে উল্লেখ করেন।

অনেকে শুধু জনপ্রিয় হওয়ার জন্য নিজেই ভাইরাল হওয়ার চেষ্টায় থাকেন। আর এর অংশ হিসেবে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের ছবি, ভিডিও কিংবা কোনো বক্তব্য- তা নির্মিত হোক বা গোপনে ধারণ করা স্ক্যান্ডাল ভিডিও। এভাবে কেউ ভাইরাল হচ্ছেন নিজেই, কেউ অন্যের ফাঁদে পড়ে। ভাইরাল শব্দটির এখন হাজার রূপ।

ভাইরালিজমের এ যুগে কেউ রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাচ্ছেন, কেউ খলনায়কে পরিণত হচ্ছেন ভক্তদের কাছে। কারণ কেউ একটা খারাপ কিছু করলেই সেটা সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দিচ্ছে বা ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে কোনো না কোনোভাবে। আবার কেউ কেউ অন্যের ওপর ক্ষিপ্ত হয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সম্পর্কে গোপন তথ্য ভাইরাল করে দিচ্ছে। কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত বিরোধের জের ধরে তার একান্ত গোপন কোনো বিষয় ভাইরাল করে দেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। ভাইরাল না করার শর্তে কেউ কেউ মোটা অঙ্কের অর্থও দাবি করছে।

কিন্তু প্রশ্ন হল, এসব ভাইরালের কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে সমাজে? অনেক ক্ষেত্রেই এক কুৎসিত ভাইরাল ভাইরাসে আক্রান্ত এ যুগের কিছু তরুণ-তরুণী। কেউ ভাইরাল হলে মানুষ কিছুদিন তাদের চেনে, মনে রাখে।

কিন্তু সে কীভাবে কোন উপায়ে ভাইরাল হল তাও কিন্তু মানুষ ভোলে না। একজন ভালো একটা গান গেয়ে তার প্রতিভা প্রদর্শন করে ভাইরাল হলে মানুষ তাকে একজন গায়ক হিসেবেই চেনে ও মনে রাখে। আবার কেউ রিকশাচালককে পিটিয়ে কিংবা ভালগারিটি করে ভাইরাল হলেও মানুষ তার ভাইরাল হওয়ার প্রক্রিয়াটা স্মরণে রাখে। কিন্তু এ যুগের বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীই বিষয়টা বুঝতে চায় না। তাদের চিন্তাভাবনা হচ্ছে, কোনোভাবে ভাইরাল হতে পারলেই তারা সেলিব্রিটি বনে যাবে!

দেশের স্বপ্ন ও সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তরুণ সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আত্মপ্রত্যয়ী তারুণ্য একটি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। আনতে পারে ইতিবাচক পরিবর্তন।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ স্বাধীনতা পরবর্তীকালে জাতির প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে তরুণরা দৃপ্ত ভূমিকা পালন করেছে। কাজেই জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তরুণদের সবরকম অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে হবে।

গুরুত্ব দিতে হবে তরুণসমাজের উন্নয়নে। আমাদের কিশোর ও তরুণদের এই ভাইরাল ভাইরাস থেকে দূরে রাখতে হবে। ভাইরাল ভাইরাসের এ নবজোয়ার যদি থামানো না যায়, তাহলে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে সমাজে। এটি ভাইরাসের মতোই ধ্বংস করবে তরুণদের অগ্রগতি ও মানবজীবনের সুখ-সমৃদ্ধি।

আফজাল তাহফি রোহান : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


শর্টলিংকঃ