ভাঙছে বিএনপিঃ একে একে জোট ত্যাগ করছে শরিক দলগুলো


বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। যে দলটির চেয়ারপারসন বেগম জিয়া দুর্নীতি ও এতিমখানার টাকা আত্মসাতের অপরাধে কারাগারে অবস্থান করছেন। তার অনুপস্থিতিতে তার বড় ছেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক জিয়া দুর্নীতি মামলায় দেশ পলাতক অবস্থায় লন্ডনে অবস্থান করছেন। দলের এই দুই মহারথীর অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে দলটি।

এছাড়াও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলো তারা। পরবর্তীতে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে তারা সাতটি আসন পায়।

পরবর্তীতে বিএনপি ঘোষণা দেয় সংসদে তারা শপথ বাক্য পাঠ করবেন না। এক্ষেত্রেও দলে দেখা দেয় মতানৈক্য। শপথ বাক্য পাঠ না করার ঘোষণা আসে সুদূর লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার নিকট থেকে। তারেকের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দলে থেকে একজন শপথ পাঠে অংশ নেয়।

পরবর্তীতে তাকে দল থেকে বের করে দিলেও তারেক জিয়া আবার ঘোষণা দেয় সবাইকে শপথ বাক্যে অংশ নেয়ার জন্য। দলের বিভিন্ন এই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে বিএনপি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে শরীক দলগুলো। যার কারণে বিএনপিতে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের হ য ব র ল অবস্থা।

নানা কারণে আগে থেকেই বিএনপির উপর দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর তীব্র ক্ষোভ ছিল। ইতোমধ্যেই সেই ক্ষোভকে কেন্দ্র করেই জোটের দীর্ঘদিনের সঙ্গী বিশেষ করে জিয়া পরিবারের বিশ্বস্ত কয়েকটি দল জোট থেকে বের হয়ে গেছে। সর্বশেষ বের হল আন্দালিব রহমান পার্থর বিজেপি এবং কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। এখন আরও অন্তত চারটি দল জোট ছাড়তে সরকারমুখী যোগাযোগ ও তৎপরতা চালাচ্ছে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামিক পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি—এ চার দল একত্রে জোট ছাড়তে তৎপরতা চালাচ্ছে

অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, বিএনপির ভুল রাজনীতি বা নেতাদের মিথ্যা অহংবোধ এবং সঠিক সমন্বয়ের অভাবে ধীরে ধীরে জোট শরিকরা বিশ দল থেকে বেরিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে খুব বেশি দেরি নেই, যখন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক মাঠে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ে পড়া বিএনপি সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়বে।

অতীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে ৬টি রাজনৈতিক দল বেরিয়ে যায়। সর্ব প্রথম ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোট ছাড়ে ন্যাপ ভাসানী। এরপর শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি-এনপিপি জোট ত্যাগ করে।

এরপর ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, মুফতী ফয়জুল্লাহ, আবুল হাসনাত আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করে। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর জেবেল রহমান গানি ও গোলাম মোস্তফা ভুইয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ জোট ত্যাগ করে। একই দিন খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি জোট থেকে বের হয়।

এ কারণে গত এক বছরে নীতিনির্ধারণী বিষয়ে দলটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত খুব কমই নিতে পেরেছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত বিএনপিকে পেছনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে দলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতিও তারা বিশ্বাস করবে না। মনে করবে, দলটি তাদের এমন প্রতিশ্রুতি থেকে যে কোনো সময় সরে যেতে পারে।


শর্টলিংকঃ