- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

ভারতীয় জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল উসামার


ইউএনভি ডেস্ক:

ভারতীয় জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল উগ্রবাদ ছড়ানো ইসলামী বক্তা আলী হাসান উসামার। ভারতীয় জঙ্গিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে উসামা একাধিকবার সেদেশে গিয়েছিল সে। তার সঙ্গে একাধিক ভারতীয় জঙ্গির সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার তথ্য পেয়েছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সিটিটিসি।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, উসামার ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হচ্ছে। কার কার সঙ্গে সে যোগাযোগ করতো তা জানার চেষ্টা চলছে।

গত বুধবার (৫ মে) রাতে সংসদ ভবনে হামলা করতে আসা মোহাম্মদ আল সাকিব নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই রাজবাড়ী থেকে আলি হাসান উসামা নামে এক ধর্মীয় বক্তাকে গ্রেফতার করা হয়, যার বিরুদ্ধে ওয়াজের নামে উগ্রবাদ ছড়ানো ও জিহাদের ডাক দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আলি হাসান উসামা আনসার আল ইসলামের আধ্যাত্মিক নেতা ছিল। তার নির্দেশেই সংসদ ভবনে হামলার পরিকল্পনা করেছিল আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য সাকিব।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, উসমা ও সাকিবকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। উসামার সঙ্গে যাদের সাংগঠনিক যোগাযোগ ছিল আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, উসামার সঙ্গে একাধিক ভারতীয় জঙ্গির যোগাযোগ রয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। এর মধ্যে নজিবুল্লাহ নামে এক জঙ্গিকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম থেকে গ্রেফতার করে স্পেশাল টাস্কফোর্স- এসটিএফ। সেসময় নজিবুল্লাহর সঙ্গে ওসামার একাধিক ছবি ও যোগাযোগের তথ্য পায় ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, ওসামার সঙ্গে বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের প্রধান আল ইমরানের সঙ্গেও যোগাযোগ রয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি যে উগ্রবাদ প্রচার করছে, সেই তামিম আল আদনানীর সঙ্গেও উসামার যোগাযোগ রয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে উসামা অনেক কিছুই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। সামাজিক যোগাযোগ অ্যাপস টেলিগ্রাম ও সিগনালে একাধিক জঙ্গি গ্রুপের সঙ্গেও ওসামার যোগসূত্র পেয়েছেন। এছাড়া চলতি বছরের ৫ মার্চ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি দল হরকাতুল জিহাদ নেতা মাইনুলের সঙ্গেও আলি হাসান উসামার যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আলী হাসান উসামা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে এখনই ‘জিহাদ’ করা ফরজ বলে বয়ান করতো। এছাড়া সে গাজওয়াতুল হিন্দ নামে একই বইও লিখেছে। তার সকল ওয়াজেই জিহাদের জন্য তরুণদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান ছিল। এছাড়া উসামা যেসব বই লিখেছে সেগুলোতেও সে উগ্রবাদী মতাদর্শ ছড়াতো। তার বইয়ের যারা প্রকাশক তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

উগ্রবাদ ছড়ানো ইসলামী বক্তাদের তালিকা হচ্ছে

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, আলি হাসান উসামার মতো ওয়াজের নামে যারা প্রতিনিয়ত উগ্রবাদ প্রচার করে আসছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তবে তদন্ত ও গ্রেফতারের স্বার্থে ওই তালিকায় থাকা ইসলামী বক্তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ১০-১২ জন ইসলামী বক্তা রয়েছেন, যারা কট্টর বয়ানের মাধ্যমে উগ্রবাদ ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। কোরআন হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যার বদলে তারা মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে এখনই জিহাদের সময় বলে তরুণদের ভুল পথে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

সিটিটিসির একটি সূত্র জানায়, ইসলামী বক্তাদের ওই তালিকায় মুফতি হারুন ইজহারের নাম রয়েছে। তবে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার ঘটনায় এলিট ফোর্স র‌্যাব তাকে চট্টগ্রামের নিজ মাদ্রাসা থেকে গ্রেফতার করে। সহিংসতার মামলার রিমান্ড শেষে সিটিটিসির কর্মকর্তারাও তাকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।

সিটিটিসির ওই সূত্র জানায়, আলি হাসান উসামা, মুফতি হারুন ইজহার ছাড়াও ওই তালিকার প্রথম দিকে নাম রয়েছে মাহমুদুল হাসান গুনবী নামে এক ইসলামী বক্তার নাম। মাহমুদুল হাসান গুনবি দীর্ঘ দিন ধরে ওয়াজের নামে উগ্রবাদ প্রচার করে আসছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার অভিযানের কারণে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। তার অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। তাকে যে কোনও সময় গ্রেফতার করা হবে বলে জানান সিটিটিসির ওই কর্মকর্তা।