- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

ভ্যাকসিন কিনতে দ্বিতীয় ধাপে ৭১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ


ইউএনভি ডেস্ক:

মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় সারাদেশের মানুষ। চলতি মাসেই সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে করোনা ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সিরামের সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রথম ধাপে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বা টিকা কিনে জনগণের মাঝে বিনামূল্যে দেয়া হবে। এই ভ্যাকসিন কিনতে প্রস্তাবিত খরচের দ্বিতীয় ধাপে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি এ টিকার ভারতীয় উৎপাদক সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ৫ নভেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট।

ভ্যাকসিনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর (ডিজিএইচএস) ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করে। পরে প্রথম ধাপে ৭৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ। যার মধ্যে ভ্যাকসিন কিনতে ৬৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচ হিসাবে বাকি ৯৯ কোটি ৯৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সর্বশেষ বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দ্বিতীয় ধাপে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

এর আগে সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত ভ্যাকসিনের পরিবহন ব্যয়সহ প্রতি ডোজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫ মার্কিন ডলার। ভ্যাকসিনের আনুষঙ্গিক উপকরণের জন্য ব্যয় ১ দশমিক ২৫ ডলার ধার্য করা হয়। এতে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন বাবদ মোট খরচ দাঁড়ায় ৬.২৫ ডলার। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নেয়া তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মোট মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সরকারিভাবে এই ভ্যাকসিন ক্রয়, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসাবে এই টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, দেশে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসবে। বেক্সিমকো ২৭ জানুয়ারি ডিজিএইচএস-এর কাছে ভ্যাকসিন হস্তান্তর করবে। সরকার ২৬ জানুয়ারি থেকে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমের জন্য অনলাইন নিবন্ধন শুরু করবে। এছাড়া ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকা দেয়া শুরু হতে পারে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের চাহিদাপত্র পাওয়ার পর গত ৩০ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে অর্থনৈতিক বিষয়ক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে সারসংক্ষেপ পাঠান। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে পাঠানো এ সারসংক্ষেপে করোনা ভ্যাকসিন কিনতে সরকারের ব্যয় ও ডোজপ্রতি ভ্যাকসিনের ব্যয় উল্লেখ করা হয়।

পরে গত ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে করোনা ভ্যাকসিন কিনতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ থেকে প্রথম ধাপে অর্ধেক বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। এরপর অর্থ বিভাগ (বাজেট অনুবিভাগ-১) থেকে অর্থ বরাদ্দের মঞ্জুরি আদেশ জারি করা হয়। পরে আজ অর্থ বিভাগের যুগ্ম-সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দ্বিতীয় ধাপে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

এদিকে দ্বিতীয় ধাপে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত দেয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে; অগ্রিম অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থের ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে হবে; অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং ভ্যাকসিন ক্রয় ও কোল্ড চেইন ইকুয়েপমেন্ট, এডি সাইরিংগস বক্সেস ক্রয় বাবদ ব্যয় সম্পাদনের এক মাসের মধ্যে ব্যয় করা অর্থ সাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নসহ বিল-ভাউচার ও ব্যয় প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপে খাতভিত্তিক বরাদ্দ

প্রথম ধাপে তিন কোটি ডোজ টিকা জনগণের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপে টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। বিভিন্ন খাতে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রস্তাবিত করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ (ওষুধ ও প্রতিষেধক) বাবদ ৮০৯ কোটি ৬৮ লাখ ২৯ হাজার টাকার বিপরীতে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে দুই ধাপের বাজেটে আপ্যায়ন, প্রচার, ব্যবস্থাপনা, সম্মানী, জরিপ এবং চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করা হলেও কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।

দ্বিতীয় ধাপে আপ্যায়ন ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৬৩ কোটি ৪৫ লাখ ২২ হাজার টাকার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়নি। প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ১৪ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ১ কোটি ২ লাখ টাকার পরিপ্রেক্ষিতেও কোনো টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ভ্রমণ ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার টাকার পরিপ্রেক্ষিতেও কোনো বরাদ্দ হয়নি। বরাদ্দ হয়নি চিকিৎসা ব্যয় খাতেও।

ওষুধ ও প্রতিষেধক বাবদ ৬২৮ কোটি ৪৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, পণ্যের ভাড়া ও পরিবহন ব্যয়ের প্রস্তাবিত ৭২ কোটি ৭২ লাখ ২৮ হাজার টাকার পুরোটাই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য বিধান সামগ্রীর জন্য ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার পুরোটাই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, ভ্রমণ খাতে ৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা, চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বাবদ প্রস্তাবিত ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিপরীতে পুরোটাই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রকৌশলী এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি বাবদ প্রস্তাবিত ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার পুরোটাই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, করোনার ভ্যাকসিন কিনতে আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলাম, তার দ্বিতীয় ধাপের টাকা পেয়েছি। তবে কোন খাতে বরাদ্দ পায়নি বা দেয়া হয়নি সেসব জানতে বাজেট শাখায় যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

কয়েকটি খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হলেও দুই ধাপে সেটি বরাদ্দ হয়নি, সেসব খাতের অর্থ কিভাবে সামাল দেবেন জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট অনুবিভাগ) রাশেদা আকতার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এসব খাতে হয়তো অর্থ বরাদ্দ দেবে বলেই দুই ধাপেও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তারা হয়তো ডোজ কেনার জন্য টাকা দিচ্ছে। আপ্যায়ন কস্ট (খরচ) তো অন্য খাতে আছে। এখানে আপ্যায়ন খরচ দিলে তো মিসইউজ (অপব্যবহার) হবে। তবে প্রচারের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর এমআইএসে একটি বরাদ্দ আছে। প্রচার প্রচারণা তো লাগবেই, কারণ ভ্যাকসিন কোথায় কখন দেবেন সেটা তো পাবলিককে জানাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, হয়তো এসব খাতে এখন টাকা দেয়নি পরে জাস্টিফিকেশন করলে বরাদ্দ দেবে। তারা দুই ধাপে এই বিষয়ে বরাদ্দ দিলেও আমাদের কখনো অর্থ মন্ত্রণালয় ডিসকারেজ করে না। আমরা ঠিক মতো জাস্টিফিকেশন দিতে পারলে অর্থ মন্ত্রণালয় এটিকে পজিটিভলি দেখে। প্রয়োজন হলে আমরা আবার চাইব। তবে করোনা খাতের টাকাটা পুরোপুরি আলাদা, এটি সংশোধিত বাজেটের বাইরে