ভ্যাকসিন গ্রহণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার আহবান প্রধানমন্ত্রীর


ইউএনভি ডেস্ক:

ভ্যাকসিন গ্রহণে গ্রামের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতে আনসার ভিডিপি বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪১তম জাতীয় সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, আমরা করেনাভাইরাস মোকাবিলা করছি। প্রতিটি মানুষ যেন করোনা ভ্যাকসিন নেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেকে ভয় পায়, সুচ ফোটাতেও ভয় পায়। সেক্ষেত্রে আপনারা গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবেন। আমরা চাই, সবাই টিকা নিক, সুরক্ষিত থকুক। দেশের মানুষ যাতে এই মহামারি থেকে মুক্তি পায়। তার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির যেকোনো প্রয়োজনে আনসার বাহিনী কাজ করেছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নিসন্ত্রাসের সময় মানুষের জানমাল রক্ষায় আনসার বাহিনীকে সম্পৃক্ত করেছি। তারা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই অগ্নিসন্ত্রাসের মোকাবেলা করেছে। এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই।

তিনি বলেন, আনসার বাহিনী তাদের প্রতিটি কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করেছে। নানামুখী প্রশংসনীয় উদ্যোগ তারা নিয়েছে। বাল্য বিবাহরোধ, মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন- এ ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। এতে আরও বিশেষ দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি৷ গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা বিপথে না যায়।

মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আনসার ভিডিপি বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ। সকল মানুষ অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা ও চিকিৎসা পাবে, উন্নত জীবন পাবে। আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি। সেক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ফেব্রুয়ারি মাস, ভাষার আন্দোলনের মাস। এ মাসে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই। তারা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা করেছে। আমি তাদের স্মরণ করছি।

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অবদানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামসহ প্রতিটি আন্দোলনে আনসার বাহিনীও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এটি সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এর ৫০ হাজারের অধিক সদস্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনার দায়িত্ব পালন করে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই বাহিনীর উন্নয়নের জন্য আমরাও নানা সময় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। পদোন্নতি, রেশন সুবিধা, চাকুরি স্থায়ীকরণ ও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেটাকে কাজে লাগাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছি। তাদের আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য আমাদের বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পে কাজের সুযোগ দিয়েছি।

তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অবদান ও নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে এই বাহিনীতে নারীদের আরও সম্পৃক্ত করতে হবে। গ্রামের মানুষদের আরও সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই বাহিনীর জন্য আনসার ভিডিপি ব্যাংক করে দিয়েছি। যাতে স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে পারে। এটির ২৫৯টি শাখা রয়েছে। এই করোনা মহামারীতে সব ব্যাংকে বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছি। আনসার ভিডিপি ব্যাংককেও ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছি। যাতে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারাও বিশেষ প্রণোদনা দিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আনসারদের নানা সুবিধার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আর্থিকভাবে অসচ্ছল কিন্তু রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে সক্রিয় ভিডিপি সদস্যদের আমরা বাড়ি করে দিচ্ছি৷ এটা চলমান থাকবে। অবশ্য, মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না, এটা আমাদের লক্ষ্য। এজন্য ৮ লাখ গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দিচ্ছি।

এসময় প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি একটা জায়গায় গেলে কিছু কেনাকাটা করতে পারি। সেটা হলো এই সফিপুরের আনসার একাডেমিতে। কিন্তু এবার করোনার কারণে তো যাওয়া হলো না। এটি দুঃখজনক।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মুস্তফা কামাল উদ্দিন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাহিনীর মধ্যে সাহসিকতা ও কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘সাহসিকতা পদক’ প্রদান করেন।


শর্টলিংকঃ