মঙ্গল গ্রহে অবতরণ করল নাসার রোবটযান


ইউএনভি ডেস্ক: 

ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন করল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। মঙ্গল গ্রহে সফল অবতরণ করছে নাসার মহাকাশযান পারসিভারেন্স। কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা ৫৫ মিনিটে মঙ্গল গ্রহের ‘জেজোরো ক্রেটার’ এলাকায় অবতরণ করে রোভারটি।

নাসার সাদার্ন ক্যার্লিফোর্নিয়ার জেট প্রপালশিয়াল ল্যাবরেটরি থেকে অবতরণের ঐতিহাসিক ও শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। নাসা টিভি ও নাসার ওয়েবসাইটে লাইভ দেখানো হয় অবতরণের মুহূর্ত। এছাড়া নাসা অ্যাপ, ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুক ও লিঙ্কডইনের মাধ্যমেও অবতরণের দৃশ্যটি সরাসরি দেখতে পেয়েছে পুরো বিশ্ব।

গত বছরের জুলাইয়ে পৃথিবী থেকে উড়াল দেয়ার সাত মাস পর ৪৭ কোটি মাইল পথ পাড়ি দিয়ে মঙ্গল গ্রহে পা রাখার জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে পারসিভারেন্স রোভার। অবতরণের ঐতিহাসিক মুহূর্ত ঘটে বাংলাদেশ সময় ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২ টা ৫৫ মিনিটে।

রোভারটির সফল অবতরণের পরপরই উল্লাসে ফেটে পড়েন ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডিনার গবেষণা কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা। ছয় চাকার মহাকাশযানটিতে রয়েছে একটি ল্যান্ডার ভিশন সিস্টেম, রয়েছে টেরেন রিলেটিভ নেভিগেশন, রিয়েল টাইম ছবি তুলে রাখার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র।

মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে এটি। এছাড়া, মঙ্গলের মাটিতে কি কি উপাদান রয়েছে, তা নিয়ে গবেষণা চালাবে পারসিভারেন্স রোভার। এজন্য মহাকাশযানটিতে রয়েছে বিশেষ যন্ত্র, যার নাম মক্সিই। এই যন্ত্রের সাহায্যে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন তৈরি করা যাবে বলে জানান নাসার বিজ্ঞানিরা।

১ টন ওজনের পারসিভারেন্স রোভার মঙ্গলের ‘জেজোরো ক্রেটার’ নামক যে এলাকায় অবতরণ করেছে, ওই এলাকাটির আয়তন ২৮ মাইলেরও বেশি। এই জায়গাটিতে কয়েক কোটি বছর আগে কোনো সুবিশাল আগ্নেয়গিরির জন্য বিশালাকার গর্ত বা ক্রেটার তৈরি হয়েছিল। উঁচু উঁচু পাহাড়ে ভর্তি পুরো এলাকা। ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার পর পর সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে সেখানে।

মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো করতেই ‘জেজোরো ক্রেটার’ এলাকায় রোভারটিকে অবতরণ করিয়েছে নাসা। গবেষকদের বিশ্বাস, ওই এলাকায় এক সময় হৃদ ছিল, পরে সেটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তাই মঙ্গলে প্রাণের ইতিহাস সন্ধানে এটি সবচেয়ে সম্ভাবনায় এলাকা।

পারসিভারেন্স রোভার অনেক দিক থেকেই প্রথম হওয়ার রেকর্ড গড়েছে। মঙ্গল থেকে মাইক্রোফোনিক সাউন্ড সরবরাহ করা প্রথম রোভার হতে যাচ্ছে পারসিভারেন্স। সেই সঙ্গে আগের যেকোনো রোভারের চেয়ে বেশি ক্যামেরা আছে এটিতে। রয়েছে প্রাণের অস্তিত্ব অনুসন্ধানী ‘শার্লক’ ও ‘ওয়াটসন’ নামে দুটি যন্ত্রও।

এছাড়া মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এবারই প্রথম রোভারের ভেতরে করে মঙ্গল গ্রহে একটি হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে নাসা। এর আগে পৃথিবীর বাইরে আর কোনো গ্রহে বা উপগ্রহে ওড়ানো হয়নি হেলিকপ্টার। এবারই প্রথম মঙ্গল গ্রহে উড়তে যাচ্ছে হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইনজেনুয়িটি’। মঙ্গলপৃষ্ঠে হেলিকপ্টারটি ৩ থেকে ৫ মিটার উঁচুতে উড়ে অন্তত ৫০ মিটার এলাকা অনুসন্ধান চালাবে। প্রতিটি ফ্লাইটের জন্য সময় লাগবে দেড় মিনিট। এতে রয়েছে দুটি ক্যামেরা, কম্পিউটার ও নেভিগেশন সেন্সর। মঙ্গলে রাতের বেলায় উষ্ণতা নেমে যায় মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এক্ষেত্রে কপ্টারটির সৌর সেল ব্যাটারিকে রিচার্জ করে চালু রাখবে। হেলিকপ্টারটির ওজন মাত্র ৪ পাউন্ড।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সাহায্যে নিজেই চলবে ইনজেনুয়িটি। নাসার তথ্যানুযায়ী, পৃথিবী থেকে মঙ্গলের বিশাল দূরত্বের কারণে পৃথিবী থেকে ইনজেন্যুইটিকও নিয়ন্ত্রণ করা একপ্রকার অসম্ভব। আর তাই কম্পিউটারে প্রোগ্রাম করা পথেই চলবে এই হেলিকপ্টার। তবে হেলিকপ্টার বলা হলেও আসলে এটি একটি ক্ষুদ্র ড্রোন।

 


শর্টলিংকঃ