Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

মঞ্চনাটক ‘স্তালিন’-এ ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ


ইউএনভি ডেস্ক:

নতুন মঞ্চনাটক ‘স্তালিন’-এ ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ আনা হয়েছে। আর এই অভিযোগ করেছেন খোদ দর্শকরা। যার রেশ শেষ পর্যন্ত বাম দলগুলোর নেতাকর্মী পর্যন্ত ছড়িয়েছে।

বুধবার বিকাল থেকেই নাট্যকর্মীদের পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন ‘স্তালিন’ নাটকের বিরোধিতাকারীরা। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সেখানে হাজির হয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ।

এ পুলিশি পাহারার মধ্য দিয়েই বিকাল ৫টার কিছু পরে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠিত হয় ‘স্তালিন’ নাটকের তৃতীয় প্রদর্শনী।

প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী বজলুর রশীদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, বাসদ মার্কসবাদী কেন্দ্রীয় নেতা মানষ নন্দী, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতা রাজিকুজ্জামান রতন, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা হামিদুল হক, নয়া সমাজতান্ত্রিক গণমোর্চার জাফর হোসেন, বির্তন সাংস্কৃতিক সংগঠনের মফিজুর রহমান লালটু, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শম্পা বসু, নারী মুক্তি ফোরামের শিমা দত্ত প্রমুখ।

প্রতিবাদ সমাবেশে বাম সংগঠনের নেতারা বলেন, নাটকে কালো রঙের কাস্তে হাতুড়ি দিয়ে সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের যে লাল পতাকা, সেই পতাকাকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। নাটক যখন শুরু হয়, তখন একজন জোকার হিসেবে দেখনো হয়েছে।

দেখানো হয়েছে চৌদ্দ বছরের একজন মেয়েকে ভোগ করে এসেছে, আজ বারো বছরের এক মেয়েকে ভোগ করতে এসেছে স্তালিন। নারীদের ভোগ বা মদসেবন- এসব এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এখানে স্তালিনের মুখে বলানো হচ্ছে যে মাওসেতুনকে হত্যা করার জন্য স্তালিন চেষ্টা করছে। বলা হয়েছে, দুর্ভিক্ষের সময়ে স্তালিন বলছে গত পাঁচ বছর আগে যে দুর্ভিক্ষ ঘটানো হয়েছে, তা পরিকল্পিতভাবে।

এখানে দেখানো হয়েছে, কৃষক আন্দোলনকে দমনের জন্য এ দুর্ভিক্ষ ঘটানো হয়েছে। আবারও দুর্ভিক্ষ ঘটানোর মাধ্যমে কৃষক আন্দোলন দমন করা হবে। এ ধরনের অসংখ্য ভুলেভরা তথ্য সেখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা বলেন, তারপরও আমরা ধৈর্য সহকারে নাটকটি সেখানে দেখি।

শেষ করার পরে যখন আমরা দাঁড়িয়ে বলি এখানে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই। শুধু আমরা নয়, আমাদের পাশের দর্শক সবাই বলেছেন এ বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিত।

আমরা সেখান থেকে বের হয়ে যখন লাউঞ্জে অবস্থান করছি, তখন এই নাটকের নাট্যকার কামাল উদ্দিন নিলু এলেন। পরে আমরা তাকে প্রশ্নটা করি। এখানে যে তথ্য বা ইতিহাসগুলো বলা হল, তার রেফারেন্স কী? আপনি এভাবে তথ্য বিকৃতি করতে পারেন না।

তিনি এটার কোনো সদুত্তর না দিয়ে ক্ষেপে যান এবং আমাদের বলা শুরু করেন, আপনারা কত বড় কমিউনিস্ট? আমি তার চেয়েও বড় কমিউনিস্ট। তিনি বলেন, ইতিহাস সম্পর্কে না জেনে কথা বলতে আসবেন না। সেখানে অনেক গুণিজন ছিলেন। নাট্যজন মান্নান হীরাও ছিলেন।

সোভিয়েত রাশিয়ায় যখন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানে আমরা দেখেছি নারীরা মানুষের মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছিল। স্তালিন যেমন সোবিয়েত রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠ করেছিলেন, পাশাপাশি এই সমাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতেও বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।

আমরা জানি, সেই সময়ে সেখানে কোনো পতিতাবৃত্তি ছিল না। নারীদের কখনোই শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়নি। সারা বিশ্বের মানুষের সামনে সে সময় স্তালিন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।

কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি, এই নাটকের মধ্য দিয়ে স্তালিনের চরিত্রকে এমনভাবে বিকৃত করা হয়েছে যে তিনি মদ্যপ ছিলেন, নারীভোগী ছিলেন, একজন সাংস্কৃতিকর্কর্মী হিসেবে বলতে চাই, নাট্যকার তার ভুল সোধরাবেন অথবা মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই ধরনের নাটক তিনি যেন কখনও না তৈরি করেন।

নাটকটি মঞ্চে নিয়ে এসেছে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটার।


Exit mobile version