মত প্রকাশের ‘বাস্তবতা’


ইউএনভি ডেস্ক:

বর্তমানে ইন্টারনেটের অভিগম্যতা, ব্যবহার ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রসারের ফলে মিডিয়ার ব্যাপ্তি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত। এর ফলে তথ্যের সাগরে আমরা ডুবে আছি বটে, তবে সঠিক তথ্য কোনটি সেটি বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভুয়া বা সূত্রহীন সংবাদ বা গুজবনির্ভর সংবাদ এখন সারা বিশ্বের মাথাব্যথার একটা বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে অপরাধপ্রবণতাও বেড়ে গেছে। এ রকম বাস্তবতায় বাংলাদেশে প্রথমে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬’ এবং পরে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ আইন প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এ ধরনের আইনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য, তবে সেটি যদি মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে এর সংস্কারের কথাও ভাবনায় রাখা প্রয়োজন। আর সে প্রয়োজন দেশ ও দেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থেই।

 

যখন পৃথিবীর কোনো কোনো দেশের কারাগারগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অপরাধীর অভাবে, তখন আমরা আমাদের দেশে কারাগার সম্প্রসারণ করছি। কারাগারের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করে পুরোনো আইনকে আরও কঠোর রূপে নতুন রূপে ফিরিয়ে এনে দণ্ড বাড়াচ্ছি। আবার একই আইনের নানা প্রকার প্রয়োগ করছি। আর এসবই আমরা করছি আইনের যে নৈতিকতা, সেই নৈতিকতা আমলে না নিয়ে, অবহেলা করে। ফলে কখনও তা ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’য় পরিণত হচ্ছে। কখনও আবার তা ‘ফস্কা গেরো’র ‘বজ্র আঁটুনি’তে পরিণত হচ্ছে। কখনওবা সেটা সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ছে দেশের নাগরিকদের প্রদত্ত রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গেও। দেশের সংবিধান তার নাগরিককে যে অধিকার দিয়েছে, সে অধিকার নির্বিকার এবং নির্বিচারে লঙ্ঘনের অবাধ সুযোগ করে দিচ্ছে। ফলে ‘দুষ্টের দমনে শিষ্টের পালনে’র লক্ষ্যে যে আইন প্রণীত হচ্ছে, তা শিষ্টকে দমন করছে আর দুষ্ট দিব্যি থেকে যাচ্ছে বহাল তবিয়তে। আর এই আইনি ধাঁধার ফাঁক গলে প্রাণ হারাচ্ছে নির্দোষ ব্যক্তি, জেল খাটছে যিনি অপরাধ করেননি এমন নিরীহ মানুষ।

সাম্প্রতিক বাস্তবতায় প্রণীত ২০১৮ সালের ৪৬নং এই আইনটি মন্ত্রিপরিষদ অনুমোদন করেছে ২৯ জানুয়ারি ২০১৮তে। জাতীয় সংসদে পাস হয় ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮তে। রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করেছে ৮ অক্টোবর ২০১৯ সালে। সর্বমোট ৯ অধ্যায় এবং ৬২টি ধারা সমৃদ্ধ প্রণীত এই আইনটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ‘সম্পাদক পরিষদ’। তাদের সেই উদ্বেগ, তাদের পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে খুবই সঙ্গত। কারণ এই আইন মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করে ফেলবে।


শর্টলিংকঃ