মনোনয়নপ্রত্যাশীর ছড়াছড়ি আওয়ামী লীগে বিএনপিও সক্রিয়


ইউএনভি ডেস্ক:

ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও তৎপর রয়েছেন বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল ও মহাজোট শরিকদের মধ্যে তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ও লিফলেটে ছেয়ে গেছে গোটা এলাকা।

করোনায় কর্মহীন অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং উঠান বৈঠক ও গণসংযোগের মাধ্যমে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন অনেকেই। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা।

বসে নেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। তবে ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮সহ শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনের উপনির্বাচনে করোনা পরিস্থিতির কারণে দলটির অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। এরপরও প্রচার-প্রচারণায় বিভিন্ন কৌশল নিয়ে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। প্রায় প্রতিদিনই কর্মিসভা, উঠান বৈঠক, গণসংযোগসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তারা।

ইতোমধ্যে শূন্য ঘোষিত পাঁচটি আসনের প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। গত সোমবার থেকে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুরু হয়েছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদানের কার্যক্রম। এখন পর্যন্ত ঢাকা-৫ আসনে ১৪ এবং ঢাকা-১৮ আসনে ৪৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলে এত বিপুলসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকার বিষয়টি বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আজ রোববার পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদান কার্যক্রম শেষে দলের আগামীকাল সোমবার সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে পাঁচ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি সমকালকে বলেছেন, জনগণের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা বেশি, দলের জন্য যারা নিবেদিতপ্রাণ এবং দলের দুর্দিনে লড়াই-সংগ্রামে ছিলেন এমন নেতাদেরই উপনির্বাচনগুলোতে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

বিএনপি এখনও এ ধরনের কার্যক্রম শুরু করেনি। তারা নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে। তফসিল ঘোষণার পরপরই দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে দলটি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেই ঠিক করা হবে তারা উপনির্বাচনে যাবেন কিনা।

ঢাকার মাতুয়াইল, ডেমরা, সারুলিয়া ও দনিয়া ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৪৮, ৪৯, ৫০ ও ৬০ থেকে ৭০ নম্বর- এই ১৪টি ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-৫ আসন গঠিত। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত চারবারের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা গত ৬ মে মৃত্যুবরণ করায় আসনটি শূন্য হয়। অন্যদিকে ঢাকা মহানগরের দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, তুরাগ, উত্তরা ও উত্তরখান থানা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-১৮ আসন গঠিত। গত ৯ জুলাই তিনবারের এমপি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এখনও তফসিল ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন।

ঢাকা-৫ আসন : ঢাকা-৫ আসনের সদ্যপ্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার বড় ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল উপনির্বাচনে মনোনয়ন চাইছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে আরও নেমেছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব ড. আওলাদ হোসেন, আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, যাত্রাবাড়ী থানা সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্না, ডেমরা থানা সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খান মাসুদ, সিনিয়র সহসভাপতি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, রমনা থানা কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কাশেম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও শহীদ শেখ কামালের স্ত্রী শহীদ সুলতানা কামালের ভাতিজি নেহরীন মোস্তফা দিশি, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও এশিয়ান টেলিভিশনের চেয়ারম্যান হারুন-উর-রশীদ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির সাবেক সদস্য চৌধুরী সাইফুন্নবী, মুক্তিযোদ্ধা নূর ইসলাম মোল্লা প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এবং মহাজোটের কয়েকজন নেতাও প্রচারণায় রয়েছেন। ১৪ দলের তিন শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সহসভাপতি ও ঢাকা মহানগর পূর্ব সভাপতি শহীদুল ইসলাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রশিদ সরকার এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মনির হোসেন কমলও জোটের মনোনয়ন চান। এছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদও এই আসনের মনোনয়ন চাচ্ছেন।

অন্যদিকে বিএনপি থেকে চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী তৎপর রয়েছেন। তারা হচ্ছেন বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর নেতা ও গত নির্বাচনে এ আসনের দলীয় প্রার্থী নবী উল্লাহ নবী এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার।

ঢাকা-১৮ আসন : ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য মনোনয়নপ্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী, যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক সংরক্ষিত মহিলা এমপি নাজমা আক্তার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাবিব হাসান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এ কাদের খান, সাবেক বন ও পরিবেশ সম্পাদক দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম তোফাজ্জল হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসিমা ফেরদৌসী, আইন বিষয়ক সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ রোকেয়া বেগম, আওয়ামী লীগের উত্তরা পূর্ব থানার সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সহসভাপতি রহিমুল হক, উত্তরা পশ্চিম থানা সভাপতি মনোয়ার ইসলাম চৌধুরী রবিন, সহসভাপতি মজিবুর রহমান, খিলক্ষেত থানার সভাপতি কেরামত আলী দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন, বিমানবন্দর থানার সভাপতি শাহজাহান আলী মন্ডল, ভাসানটেক থানা কমিটির সাবেক সহসভাপতি ইয়াদ আলী ফকির, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার, ঢাকা মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সরদার বেলায়েত হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাইদুল ইসলাম মোল্লা, সাবেক ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, প্রয়াত এমপি সাহারা খাতুনের ভাতিজা আনিসুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খসরু চৌধুরী প্রমুখ।

অন্যদিকে গত নির্বাচনে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি নেতা শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্ব্বপন ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। এবারের উপনির্বাচনে স্বপন অংশ না নেওয়ায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে হাইকমান্ডে লবিং-তদবিরে নেমেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।


শর্টলিংকঃ