মাছ শিকারী বেশে ১০নারীকে হত্যা করে সিরিয়াল কিলার বাবু


মাহবুব হোসেন, নাটোর :
এ যেন আরেক রসু খাঁ সিরিয়াল কিলার বাবু শেখ। মাছ শিকারীর বেশে টাকার নেশায় একের পর এক ১০নারীকে হত্যা করে আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে বাবু শেখ ওরফে কালু (৪৫)। ২০১৩সাল থেকে এখন পর্যন্ত সে ৯টি ঘটনায় মোট ১০জন নারীকে হত্যা করেছে। শুধু হত্যা নয়, হত্যার আগে স্কুল শিক্ষার্থী সহ দুই নারীকে ধর্ষণও করে সে।


রবিবার বেলা ১১টায় নাটোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি একেএম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। পুলিশ জানায়, ২০১৩সালে নলডাঙ্গার বাসুদেবপুর এলাকার বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম (৪৫) হত্যার মধ্যে দিয়ে রক্ত খেলায় মেতে উঠেন তিনি। সে মামলায় চার্জভুক্ত আসামী হলেও পুলিশ তাকে কোন ভাবেই ধরতে পারে না।

এরপর লালপুর উপজেলার চংধুপইল এলাকার আনসার সদস্য সাহেরা খাতুন শারদীয় দূর্গাপূজার দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফিরে যান। এসময় পূজার ডিউটি করার সময় হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত এক সদস্যে আনসার সদস্যের কানের দুল এবং গলায় স্বর্ণের চেইন দেখে লোভ বসে। পরে বাবু শেখ ওরফে কালু ও তার সহযোগিরা রাতের কোন এক সময় আনসার সদস্যকে হত্যা করে।

ওই দিন রাতেই বাগাতিপাড়ার জয়ন্তীপুর এলাকায় ৬০ বছরের বৃদ্ধা রেহেনা বেগমকে হত্যা করে তারা। এরপর আনসার সদস্যের মোবাইল ফোনে বাবু শেখ অন্যএকজনের সাথে কথোপকথন করেন।

এই কল লিস্টের সূত্র ধরেই গত ১৯ অক্টোবর আনোয়ার ওরফে আনার ওরফে বাবু শেখ ওরফে কালুকে নাটোর রেল স্টেশন এলাকা থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে একের পর এক নারীকে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে বাবু শেখ।


পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বাবু শেখ নলডাঙ্গার বাঁশিলা গ্রামে ধর্ষন সহ ডাবল মার্ডার মা হালিমা খাতুন ওরফে শারমিন (২০) এবং প্রতিবন্ধি শিশু আব্দুল্লাহ (২) কে হত্যা করে। এছাড়া বাশিঁলা পূর্বপাড়ার আমেনা বেওয়া (৫৮), ২০১৩সালে নলডাঙ্গার বাসুদেবপুর এলাকার বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম (৪৫), ২০১৪সালে নলডাঙ্গা উপজেলার স্কুল ছাত্রী মরিয়ম খাতুন লাবনীকে ধর্ষণ সহ হত্যা, টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর বাঁশতৈল গ্রামের রুপবানু (৪৫), টাঙ্গাইল জেলার সফিপুর থানার তক্তারচালা এলাকার সমলা (৬০), নওগাঁ জেলায় এক নারীকে হত্যা করে। এই হত্যা মামলায় এক বছর জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসে বাবু শেখ।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, বিভিন্ন সময় নাটোর অঞ্চলে হত্যাকাণ্ড ঘটে আসছে। কিন্তু কোন মামলার রহস্য উদঘাটন করা যাচ্ছিলো না। বাবু শেখ বিভিন্ন স্টেশনে যাযাবরের মতো রাত্রি যাপন করতো। কিন্তু আমরা তাকে গ্রেফতার করার পর সে সব হত্যাকান্ডের বিষয় স্বীকার করেছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিআইজি একেএম হাফিজ আকতার বলেন, বাবু শেখ একজন সিরিয়াল কিলার। সে নারীদের ওপর কোন কারনে ক্ষিপ্ত হয়ে থাকতে পার। তবে সে যেগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সবগুলোর ধরনই একই। আর মধ্যবিত্ত নারীদের সে হত্যার জন্য বেছে নিয়েছে। যাতে করে পুলিশ তাকে ধরতে না পারে। হত্যা করতে করতে সে মানসিক ভাবে বিপর্যের মধ্যে রয়েছে। আমরা তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করবো।

তবে সিরিয়াল হত্যাকারী বাবু শেখ এই প্রতিবেদককে বলেন, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক ছেলে নিয়ে সংসার। স্বচ্ছল ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপনের জন্য মাছ শিকার করে সংসার চলতো তার। কিন্তু তার সহযোগিরা তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে ২০১৩সালে নলডাঙ্গার বাসুদেবপুর এলাকার বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম (৪৫) কে হত্যা করে। এরপর ঢাকায় চা বিক্রির জন্য চলে যেত। আবার কোন হত্যার পরিকল্পনা হলে তার সহযোগিরা তাকে ফোন দিলে সে চলে আসতো। এভাবে সে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে গেছে।

কখনও খারাপ বা ভয় লাগতো না এমন প্রশ্নে বাবু শেখ বলেন, টাঙ্গাইলে এক নারীকে হত্যা করার সময় তার ভয় লাগে। এরপর তিনমাস অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন। আর হত্যার সময় যাতে নারীরা চিৎকার করতে না পারে সেজন্য আগে হত্যা করা হতো।

নাটোর ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা সৈকত হাসান বলেন, সিরিয়াল কিলার বাবু শেখকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সে আরও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।#


শর্টলিংকঃ