মামলায় ঝুলছে রূপপুর প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ৭১১ কৃষকের ভাগ্য


সেলিম সরদার, ঈশ্বরদী:

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা ৯৯০ একর জমির ক্ষতিগ্রস্থ ৭১১ জন কৃষক গত দুই বছরেও পাননি তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা। এসব কৃষকের পাওনা প্রায় ২৭ কোটি টাকা তারা কবে পাবেন তাও বলতে পারেন নি কেউ। দায়েরকৃত মামলায় ঝুলছে এখন কৃষকদের ভাগ্য।

রূপপুর প্রকল্প ও ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণের জন্য ঈশ্বরদী উপজেলার রূপচর কনিকা মৌজার ৮০০ একর এবং প্রকল্প সংলগ্ন বাহিরচর ও চর রূপপুর মৌজার ১৯০ একর খাস জমিতে অস্থায়ীভাবে চাষাবাদকারিীক্ষতিগ্রস্ত ৭৭৫ জন কৃষকের ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ এককালীন সর্বমোট ২৭ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব সরকার অনুমোদন করে।

প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপিতে ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দকৃত ৭০০ কোটি টাকা থেকে এই ব্যয় নির্বাহ করার কথা। ২০১৭ সালের মার্চ মাসের শুরুতে কৃষকের জন্য টাকা বরাদ্দের অনুমোদন করে সরকার। প্রথম দিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা তৈরির পর পরই তালিকায় প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে ভূয়া নাম তালিকাভূক্ত করার অভিযোগ ওঠে।

৭৭৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের যে তালিকা তৈরি করা হয় তা সঠিক কিনা তা তদন্ত করতে তৎকালীন সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেন চররূপপুর গ্রামের কৃষক মো. জুবায়ের বিশ্বাস। পরবর্তিতে সরকার ওই তালিকা যাচাই-বাছাই করে নতুন তালিকা তৈরি করে।

তদন্ত কমিটি সূত্র জানান, ৭৭৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে সময় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর জেলা প্রশাসন প্রকৃত কৃষকের তালিকা তৈরি করার জন্য চিঠি প্রদান করে। চিঠিতে অবশ্যই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত যারা তারা যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়, এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত নয় এমন কৃষক যেন অন্যায়ভাবে তালিকায় অন্তভুক্ত হয়ে অবৈধভাবে লাভবান না হয় এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের সঠিক ব্যবহার হয় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকারও নির্দেশ দেওয়া হয়।

পরবর্তিতে সংশোধিত সেই তালিকা ধরে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন ৬৪ জন কৃষককে তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ৭৫ হাজার ৫৫০ টাকা প্রদান করেন। এদিকে তালিকা বহিভুত আরো ৫ জন কৃষক ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন বলে দাবি করে আবেদন করলে উপজেলা প্রশাসন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বরাবর নতুন ৫ জনের ক্ষতিপূরণ বাবদ আরো ১০ লাখ ৮৮ হাজার টাকার চাহিদাপত্র পাঠায়।

কিন্তু মন্ত্রণালয় সে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বরাদ্দ না দিয়ে আগের বরাদ্দ থেকে সমন্বয় করে এই ৫ জন কৃষককে টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেয় ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। একদিকে মন্ত্রণালয়ের নতুন সিদ্ধান্ত অন্যদিকে আদালতে মামলা চলমান থাকায় এসব কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা যাচ্ছেনা বলে ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন বরাদ্দ না দিয়ে আগের বরাদ্দ থেকে নতুন ৫ জনকে টাকা প্রদান করার সিদ্ধান্ত একই সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তাছাড়া আদালতের মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত টাকা প্রদান করাও যাচ্ছেনা। ফলে কৃষকদের টাকা প্রদান বন্ধ হয়ে যায়।

রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, একটি কমিটির মাধ্যমে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই তালিকা প্রণয়ন করে আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়, সে অনুযায়ী টাকা বরাদ্দের পর কোন জটিলতা হলে সেটি উপজেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কোন অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়ে সরকারের সকল কর্তৃপক্ষ সজাগ রয়েছেন, ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসনও এ বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক, শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধান হবে বলে আশাবাদী উপজেলা প্রশাসন।

ইউএনও জানান, মামলা দায়ের করার আগ পর্যন্ত ২০১৮ সালের ৫ জুলাই একযোগে ৬৪ জন কৃষককে বরাদ্দের মধ্য থেকে ১ কোটি ৭৫ হাজার ৫৫০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। পরে কৃষকরা পাবনার ২য় যুগ্ম জজ আদালতে মামলা দায়ের করলে আটকে যায় ক্ষতিপূরনের টাকা প্রদান। এখন এই মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাকি কৃষকদের টাকা প্রদান করা যাচ্ছেনা।

জানতে চাইলে রূপপুর প্রকল্প সংশ্লিষ্ট পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস বলেন, শত শত কৃষক তাদের ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওনা টাকা না পেয়ে চরম দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ঈদকে সামনে রেখে এসব কৃষক পরিবারের সদস্যরা দারুন কষ্টে আছেন, সরকারের কাছে তিনি দ্রুত এই টাকা কৃষকদের প্রদান করার দাবি জানান।


শর্টলিংকঃ