Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

মিল্কী খুনের পরই অপরাধ জগতের ডন হয়ে ওঠেন সম্রাট


যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কী খুনের পর অপরাধ জগতের ডন হয়ে ওঠেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট। তার অপরাধ-সাম্রাজ্যের পেছনে আছেন অনেক রাঘববোয়াল।


গ্রেফতারের পর সম্রাট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করেই আইনশৃংখলা বাহিনী একথা জানায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মতিঝিল এবং আশপাশের এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন মিল্কী, যুবলীগ দক্ষিণের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ এবং দক্ষিণের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম তারেক।

আধিপত্য বিস্তার এবং অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ বিরোধের জেরে আরিফ-তারেক গ্রুপ মিল্কীকে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার পর তারেক র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। সম্রাটের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আরিফ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

এ সুযোগে সম্রাট পুরো ফাঁকা মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ সময় তার সহযোগী খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল ইসলাম আরমান এবং একেএম মমিনুল হক সাঈদকে তিনি যুবলীগের পদ দেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি পুরো ঢাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন।

সম্রাট ব্যাপক ক্ষমতাবান হওয়ার পর যুবলীগ নেতা এবং টেন্ডার কিং জি কে শামীমও তার দলে নাম লেখান। শুরুতে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান তিনি।

বিশাল ক্যাডার বাহিনী সাজানোর পর জিসানের সঙ্গেও সম্পর্ক ত্যাগ করেন। মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোর ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণও চলে যায় তার হাতে।

এভাবেই সম্রাট ধীরে ধীরে অপরাধ জগতের ডন হয়ে ওঠেন। তার প্রভাব বাড়তে থাকে। অপরাধ জগতের ক্ষমতার সঙ্গে যোগ হয় রাজনৈতিক পদ-পদবির ক্ষমতা। সব ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিভিন্ন ক্লাবে চালু করেন ক্যাসিনো।

র‌্যাব বলছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দলের ছত্রছায়ায় এবং ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন ক্লাব পরিচালনা করতেন সম্রাট। তার নিয়ন্ত্রণে ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনোসহ জুয়ার আসর বসত।

এই ক্যাসিনো থেকে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। রোববার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।

র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, মতিঝিল, ফকিরাপুল, আরামবাগ এবং পল্টনের অন্তত ১০টি ক্লাবের ক্যাসিনো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতেন সম্রাট। ক্যাসিনো ব্যবসা করে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।

ক্যাসিনো ব্যবসার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করতেন। এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তিনি বিশাল ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন।

অবৈধ উপার্জনের অর্থ দিয়েই তিনি ক্যাডার বাহিনী পালতেন। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বা তার বিরুদ্ধে গেলেই তাকে ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ধরে আনা হতো তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে।

সেখানের টর্চার সেলে তার ওপর চলত নির্মম নির্যাতন। অনেককে দেয়া হতো ইলেকট্রিক শকও। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে।

রোববার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক জামায়াত নেতার বাড়ি থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অন্যতম সহযোগী আরমান। তাকে মদ্যপ অবস্থায় গ্রেফতার করার পর ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে এখন কুমিল্লার কারাগারে নির্জন সেলে বন্দি।

সোমবার বিকালে রমনা থানায় র‌্যাব সম্রাটের নামে মাদক এবং অস্ত্র আইনে দুটি মামলা দায়ের করে। সন্ধ্যার পর দুই মামলায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মহানগর হাকিম জেসমিনা আরা এজাহার এবং রিমান্ড আবেদন দেখেন। পরে রিমান্ড শুনানির জন্য বুধবার দিন ধার্য করেছেন। ওই দিন আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করার আদেশ দেন।

এদিকে রোববার সম্রাটের কার্যালয় থেকে দুটি ক্যাঙ্গারুর চামড়া উদ্ধারের ঘটনায় সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সম্রাট হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে অর্থ পাচারের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।

এর আগে ক্যাসিনো, টেন্ডার, চাঁদা এবং দখলবাজির অভিযোগে গ্রেফতার হন সম্রাটের ঘনিষ্ঠ দুই যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীম।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম যুগান্তরকে বলেন, সম্রাটকে গ্রেফতারের পর তার কার্যালয় থেকে মাদকদ্রব্য এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি পৃথক মামলা করা হয়েছে।


Exit mobile version