Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

মিয়ানমারের চীন নীতিতে পরিবর্তনের আভাস


ইউএনভি ডেস্ক: 

দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব খর্ব করতে মিয়ানমারকে কাছে টানছে ভারত। দেশটিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ করবে নরেন্দ্র মোদি প্রশাসন। রাখাইনে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করছে বেইজিং। যাকে টেক্কা দিতে, আগামী বছরই ভারতীয় অর্থায়নে শুরু হচ্ছে, কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাখাইনের সিত্তি বন্দর প্রকল্পের কাজ।


বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন-ভারত দ্বন্দ্বে মাঝখান থেকে মিয়ানমার তার অবস্থান আরও পোক্ত করে নিচ্ছে। এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইকোনমিক টাইমস।

ভারত রাখাইন স্টেটের সিটওয়েতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর ও অভ্যন্তরীণ নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ করছে। ভারতের এখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৮৪ মিলিয়ন ডলার। এ প্রজেক্টের কাজ শেষ হলে সমুদ্রপথে কলকাতার সঙ্গে রাখাইনের সিটওয়ের (এক সময়ের আকিয়াব) সংযুক্ত হবে। ভারত অনেক আগেই এ প্রজেক্ট হাতে নিয়েছিল।

বঙ্গোপসাগার ঘেঁষে এ সমুদ্রবন্দর (সিটওয়ে) ভারতের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কলকাতা থেকে পণ্য পরিবহনে (সাত বোন রাজ্যে) এ রুটটি ব্যবহৃত হবে। কালাদান নদীর মোহনায় এটি অবস্থিত বিধায় এটা ‘কালাদান প্রজেক্ট’ হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। এটা সম্পন্ন হলে নদীপথে সিটওয়ের সঙ্গে মিয়ানমারের চীন স্টেটের পালেটওয়া (Paletwa) বন্দরকে সংযুক্ত করবে। এরপর সড়কপথে পালেটওয়া সংযুক্ত হবে মিজোরামের জরিনপুই (Zorinpui)-এর সঙ্গে। এ প্রজেক্টটি সম্পূর্ণ হলে একদিকে মিয়ানমার-ভারত বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে সাত বোন রাজ্যগুলোয় পণ্য পরিবহন সহজ হবে। সুতরাং ভারতের বড় স্বার্থ রয়েছে মিয়ানমারে।

ভারতের ‘Act East Policy’র গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে মিয়ানমার। ভারত বড় অর্থনীতির দেশ হতে যাচ্ছে। চলতি বছরই ভারতের অর্থনীতি ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে ও ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে। বাণিজ্য বিনিয়োগ ভারতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে। মিয়ানমারে ভারতের বিনিয়োগ দেশটিকে ১১তম বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে পরিণত করেছে। ভারতের ৩০টি কোম্পানির সেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৭৬৩ মিলিয়ন ডলার (চীনের বিনিয়োগ ২০ বিলিয়ন ডলার)। মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও বিশাল তেল ও গ্যাস রিজার্ভ দেশটিকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে একটি আকর্ষণীয় দেশে পরিণত করেছে। ভারতও এ প্রতিযোগিতায় আছে।

মিয়ানমারকে নিয়ে চীনের মহাপরিকল্পনা

এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে চীন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তানের পর এই দেশটিকে নিয়ে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বেইজিং। লগ্নি বিস্তারে অন্যেরা যেখানে যেতে রাজি নয়, সেখানেই পা রাখতে প্রবল আগ্রহ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটির।

চীন-মিয়ানমার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭০তম বার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মিয়ানমার সফর আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

এমনিতে মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক মধুর নয়। চীনা লগ্নিতে যে ঋণের ফাঁদে দেশ বিকিয়ে যেতে পারে সেই আশঙ্কা রয়েছে মিয়ানমারেরও। তাদের বিদেশি ঋণ যত, তার ৪০ শতাংশই চীনের কাছে। সেই আশঙ্কা থেকেই মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে।

প্রতিবেদন মতে, মিয়ানমারের শান রাজ্যে চীনাদের সংখ্যা বাড়ছে। এই রাজ্যটি চীনের ইউনান প্রদেশের সীমান্তবর্তী। সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, চীনের প্রভাবেই সেখানে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না মিয়ানমার। মান্ডালায় চীনের প্রভাব এখন মিয়ানমারের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ।

এ ছাড়া সু চি নেতৃত্বাধীন এনএলডিতেও চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। মিয়ানমারের এক সূত্র জানায়, শান ও রাখাইনের সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ওপর চীনের সমর্থন খুব ভালো করেই জানেন সু চি। সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে চীনের অর্থায়নের কারণেও অসন্তুষ্ট মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেলরা। এই গোষ্ঠী ভারতীয় প্রকল্প কালাদান মাল্টিমডেলও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে।

মান্ডালেতে চীনা ও স্থানীয় বার্মিজদের মধ্যেও মাঝে মাঝে ক্ষোভ বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, মিয়ানমারের বুদ্ধিজীবীদের ধারণা মিয়ানামারে ভূখণ্ড বিস্তার করছে চীন এবং খুব শিগগিরই এটা নিয়ে সংঘাত শুরু হবে। ভারতের লাদাখ সে ক্ষেত্রে ভালো উদাহরণ হতে পারে। চলতি মাসের শুরুর দিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে চাননি সু চিসহ অন্য নেতারা। দেশটির এক সূত্রের দাবি, চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সাধারণ মানুষ নেতিবাচকভাবে দেখে।


Exit mobile version