- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

রাজশাহী বিভাগে আরো ১৯৮ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাচ্ছেন

মুক্তিযোদ্ধা

ইউএনভি ডেস্ক: 

রাজশাহী বিভাগে আরো ১৯৮ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন। বছর ধরে দেশের ৪৭০টি উপজেলা, জেলা ও মহানগর এলাকায় যাচাই-বাছাইয়ের পর অবশেষে প্রথম দফায় দেশব্যাপী এক হাজার ৩৫৯ জন ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

২০১৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ও সরাসরি আবেদন করেছিলেন প্রায় দেড় লাখ ব্যক্তি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর প্রথম দফায় তাদের মধ্য থেকে সাড়ে তেরোশ’ ব্যক্তিকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। গত ২ জানুয়ারি স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের বিষয়ে জামুকার কার্যপত্র চূড়ান্ত অনুমোদন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক। অবশ্য স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকে ইতোমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন। তবে মন্ত্রণালয় বলছে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তির অবর্তমানে তাদের পরিবারের সদস্যরাও মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা এলাকা-১ (রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা মহানগর উত্তর) মোট ৩৩৪ জন, ঢাকা এলাকা-২ (নরসিংদী, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ ও টাঙ্গাইল) মোট ১৮২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩২৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯৮ জন, রংপুর বিভাগে ১০১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৫ জন এবং সিলেট বিভাগের ১৬৫ জন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের একটি নির্ভুল তালিকা করতে চাইছি। একটু সময় লাগলেও একাধিক কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রথম দফায় তেরোশ’র মতো ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিগগিরই গেজেট জারি করা হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘স্বীকৃতিপ্রাপ্তদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে প্রশ্ন থাকলে আমরা সেটি গ্রহণ করব। প্রয়োজনে ফের যাচাই-বাছাই করা হবে। আর যারা মারা গেছেন, গেজেট হওয়ার পর তাদের পরিবারের সদস্যরা ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।’

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির জন্য ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে এক লাখ ২৩ হাজার ১৫৪টি এবং সরাসরি ১০ হাজার ৯০০টি আবেদন জমা নেওয়া হয়। পাশাপাশি আবেদনে উপজেলা বা জেলার নাম উল্লেখ করা হয়নি, এমন আবেদনও পাওয়া যায় পাঁচ হাজার ৫৫৩টি। মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, এর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। তাদের সবাইকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে দেশের ৪৭০টি উপজেলা, জেলা, মহানগরে কমিটি গঠন করে আবেদনকারী ব্যক্তিদের যাচাই-বাছাই শুরু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৪৭০ কমিটির মধ্যে ৩৮৫টি তাদের প্রতিবেদনে ‘ক’ তালিকায় ২৬ হাজার ৯৪২ জনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য সুপারিশ করে। অন্যদিকে ৮৫টি কমিটি আইনি জটিলতায় কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। যাচাই-বাছাই কার্যক্রম ও কমিটি গঠন নিয়ে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা পৃথক রিট করায় এসব কমিটির কার্যক্রমে বর্তমানে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি প্রদানকারী সরকারি সংস্থা জামুকা সূত্র জানায়, ‘ক’ তালিকায় মোট ২৬ হাজার ৯৪২ জন ব্যক্তির নথিপত্র যাচাই-বাচাইয়ের পর সাতটি বিভাগীয় কমিটির (উচ্চ পর্যায়ের) প্রতিবেদনে এক হাজার ৪৮৪ জনকে গেজেট জারির সুপারিশ করা হয়। গত মাসে জামুকার ৬৬তম সভায় তাদের মধ্যে থেকে প্রথম দফায় এক হাজার ৩৫৯ ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় তাদের ব্যাপারে জামুকার সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সমকালকে বলেন, ‘আশা করি, এ তালিকায় কোনো অমুক্তিযোদ্ধা থাকবে না। যদি থাকে তাহলে তাও চিহ্নিত করে বাদ দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্তির কার্যক্রম কখনও বন্ধ করা ঠিক হবে না। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকাভুক্তির সুযোগ থাকা উচিত। এটা বলা ঠিক হবে না যে, তালিকাভুক্তি আর হচ্ছে না। তা যদি হয় তাহলে সেটি অবশ্যই দুঃখজনক। কারণ বীরাঙ্গনা, প্রবাসীসহ অনেকেই এখনও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থেকে বাইরে রয়েছেন। তারা যদি কখনও স্বীকৃতি চান তাহলে তার বা তাদের সেই সুযোগ চলমান থাকা উচিত।’

মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বর্তমানে ডাটাবেজে তালিকাভুক্ত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লাখ ১১ হাজার। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ এক হাজার মুক্তিযোদ্ধা মাসে ১২ হাজার টাকা করে ভাতা পেয়ে থাকেন। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যরাও মাসিক ভাতা পাচ্ছেন। এর মধ্যে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা শ্রেণিভেদে ৪৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা মাসিক ভাতা ভোগ করছেন। সাত বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের মাসিক ভাতা ৩৫ হাজার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার মাসিক ৩০ হাজার এবং মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ২৫ হাজার ভাতা পাচ্ছেন। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধারা দুটি উৎসব ভাতা, বিজয় দিবস ভাতা ও নববর্ষ ভাতা পেয়ে থাকেন। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারের আমলে এ পর্যন্ত ছয়বার তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এরপরেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সপ্তম বারের মতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

আরও পড়ুন ঋত্বিক ঘটকের বোন প্রতীতি দেবী আর নেই