মুল বই ফেলে গাইডের ওপরই নির্ভরশীল হচ্ছে শিক্ষার্থীরা!


কলিট তালুকদার, পাবনা :
সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোেতে ও কিন্ডার গার্ডেন স্কুলগুলোতে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গাইড বই কেনাতে বাধ্য করছেন শিক্ষকরা। কৌশলে প্রকাশনা সংস্থাগুলো গাইড বইয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘সহায়ক বই’ হিসেবে বাজারে ছেড়ে বিক্রি করাচ্ছেন। এতে মূল বই না পড়ে গাইড বই পড়ে মুখস্থ বিদ্যার ওপরই নির্ভরশীল হচ্ছে শিক্ষার্থীরা!

জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলায় ১৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অর্ধশতাধিক কিন্ডার গার্ডেন স্কুল রয়েছে। এই স্কুল গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ স্কুলেই চলছে ‘সহায়ক বই’ বা গাইড বই। ‘নোট গাইড’ উচ্চ আদালত থেকে নিষিদ্ধের পর সেগুলো নাম পাল্টে এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ‘সহায়ক বই’ হিসেবে। বছরের শুরুতেই প্রকাশনার প্রতিনিধিদের সাথে গোপনে মৌখিক চুক্তি করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা পরিচালকরা। উপঢৌকন ও মোটা অংকের কমিশন খেয়ে শিক্ষকরা তাদের পছন্দের ‘সহায়ক বই’ (গাইড বই) কিনতে বলছেন শিক্ষার্থীদের। প্রকাশনী সংস্থার গোপন চুক্তিতে নেয়া কমিশনের টাকায় ছুটির দিনে বনভোজনে যাচ্ছেন বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডার গার্ডেনের শিক্ষকরা। বা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন।

অনেক সচেতন অভিভাবক এসব সহায়ক বই কিনতে অনীহা দেখালেও শেষ পর্যন্ত শিক্ষক ও সন্তানদের চাপে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কোনে স্কুলে একজন শিক্ষার্থীকে একাধিক গাইড বা সহায়ক বইও কিনতে হচ্ছে। আর শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকরাও মুল বই না পড়িয়ে সহায়ক বই পড়াচ্ছে। এতে শিক্ষার গুণগত মান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অভিযোগ রয়েছে, একজন সহকারী শিক্ষা অফিসারের এক নিকটাত্মীয় প্রভাব খাটিয়ে ‘চ্যান্সেলর’ নামের সহায়ক বই শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে চাপ প্রয়োগ করছেন প্রধান শিক্ষকদের।

সহায়ক বই কিনতে আসা আফজাল হোসেন নামের এক ভ্যান চালক বলেন, ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। স্কুল থেকে বলেছে গাইড বই লাগবে। কিন্তু দামের কথা শুনে না কিনে ফিরে আসি। সারাদিন খেটে যা আয় করি তাই দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। বই কিনব কীভাবে?
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, কোনো শিক্ষার্থীকে এসব বই কিনতে বলা হয় না। উল্টো অভিভাবকরা নিজেরাই এই বইগুলো কিনে থাকেন। আর দোষ দেন শিক্ষকদের। তবে মাঝে মধ্যে কিছু বিষয়ে আটকে গেলে সহায়ক বই থেকে সমাধান বের করা হয় বলে স্বীকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে গাইড বই এখন নাম পাল্টে সহায়ক বই নামে বিক্রি হচ্ছে। স্কুলে সেগুলো পড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ। তবে কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সেগুলো কেনার কথা বলেছেন বলে শুনেছি। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ