মোটরসাইকেলের নিবন্ধন মাশুল অর্ধেক কমছে


ইউএনভি ডেস্ক:

একটি মোটরসাইকেল কেনার সঙ্গে নিবন্ধন মাশুল, কর ও মূল্য সংযোজন করসহ (ভ্যাট) যত ধরনের খরচ রয়েছে, প্রতিবেশী সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তা চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। বাংলাদেশ মোটরসাইকেল সংযোজনকারী ও উৎপাদক সমিতি (বিএমএএমএ) বছরের পর বছর ধরে সরকারকে এ কথা জানিয়ে আসছিল। সরকার অবশ্য এবার সমিতিটির কিছু কথা আমলে নিয়ে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ফি প্রায় অর্ধেক কমাচ্ছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নিবন্ধন মাশুল কমানোর যে প্রস্তাব দিয়েছিল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সম্প্রতি তা হুবহু মেনে নিয়েছে। অর্থ বিভাগের অনুমোদনের পর এখন বাকি শুধু সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন। দেড় মাস পর এই প্রজ্ঞাপন জারি হবে এবং এরপরই তা কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল কেউই এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বলেছেন, কিছু বিষয় আছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে সম্পর্কিত। বিএমএএমএ চাইলে তাদের সঙ্গে দেনদরবার করতে পারে।

১০০ সিসি বা তার নিচের ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেলের নিবন্ধন মাশুল বর্তমানে ৪ হাজার ২০০ টাকা। এটি কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আর ১০০ সিসি বা তার ওপরের সিসির মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে নিবন্ধন মাশুল বর্তমানে ৫ হাজার ৬০০ টাকা। এটি কমিয়ে করা হচ্ছে ৩ হাজার টাকা।

১০০ সিসি বা তার নিচের ইঞ্জিন ক্ষমতার মোটরসাইকেলের নিবন্ধন মাশুলের সঙ্গে এত দিন ভ্যাট ছিল ৬৩০ টাকা, আর ১০০ সিসি বা তার ওপরের সিসির মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে নিবন্ধন মাশুলের সঙ্গে ভ্যাট ছিল ৮৪০ টাকা। ভ্যাটের হার ঠিকই রয়েছে। তবে নিবন্ধন মাশুল কমায় ভ্যাটও কমবে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে গত বছরের ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-জাপান যৌথ সরকারি–বেসরকারি অর্থনৈতিক সংলাপ’ শীর্ষক বৈঠকে মোটরসাইকেলের নিবন্ধন মাশুল কমানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। তার আগে ঢাকার জাপান দূতাবাস শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব দেয়। বিএমএএমএ গত ১১ নভেম্বর অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে সব ধরনের মাশুল কমানোর আবেদন করে।

নিবন্ধন মাশুলের পাশাপাশি ডিজিটাল সনদ, সম্পূরক শুল্ক, ডিজিটাল নম্বরপ্লেট, পরিদর্শন মাশুল, সড়ক কর (রোড ট্যাক্স) ইত্যাদি খরচ রয়েছে। বিএমএএমএ বলছে, ৯০ হাজার টাকার মোটরসাইকেলের মাশুল ২৩ শতাংশ অর্থাৎ ২০ হাজার ৯৩৭ টাকা। আর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মোটরসাইকেলে ১৮ শতাংশ অর্থাৎ ২২ হাজার ৭৮৯ টাকা।

বিএমএএমএ অর্থসচিবকে বলেছে, ১১০ সিসির একটি মোটরসাইকেলের মাশুল বাংলাদেশে ২২ হাজার ২৮৪ টাকা। ভারতে তা ৩ হাজার ৮৭৯, শ্রীলঙ্কায় ৪ হাজার, পাকিস্তানে ২ হাজার ৬৮, মিয়ানমারে ৩ হাজার ৩২০ এবং মালয়েশিয়ায় ১ হাজার ১৩২ টাকা।

বিএমএএমএর আবেদনে সব ধরনের মাশুল কমানোর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানানো হয়। মোট মাশুল ৪ হাজার টাকায় নামিয়ে আনার দাবি জানিয়ে বলা হয়, দেশে মোটরসাইকেল শিল্পের বাজার ছয় গুণ বড় হওয়ার বাস্তবতা রয়েছে। বিএমএএমএর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছিল দুই লাখের কম। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজারটি।

বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের অর্থ ও বাণিজ্য বিভাগের প্রধান শাহ মোহাম্মদ আশেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোটরসাইকেল এখন আর বিলাসপণ্য নয়। এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গতিশীলতা আনে, যা ভূমিকা রাখে অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতেও। নিবন্ধন মাশুল কমানোর উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে অন্য সব মাশুল কমানোর উদ্যোগও নেওয়ার দরকার।’


শর্টলিংকঃ