মোহনপুরে পানে রোগের উপদ্রব, কাজে আসছে না প্রতিষেধকও


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি পানের চাষ হয় মোহনপুরে। অনুকূল আবহাওয়া এবং চাষ উপযোগী মাটির কারণে কৃষকেরা ধানের চেয়ে বেশি পান চাষ করে। ফলে জেলার সবচেয়ে ছোট এই উপজেলায় আবাদকৃত পান বরেন্দ্র অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও পাঠানো হয়।

কৃষকেরা জানিয়েছেন, চলতি বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে পানে রোগ-বালাইয়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। সদ্য গজানো পান পাতায় কালো দাগ পড়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পচে যাচ্ছে। এ ধরনের বালাই উপজেলার পান চাষিরা আগে কখনও দেখেনি। ফলে তারা উপজেলা কৃষি অধিদফতরের দ্বারস্থ হয়।

কৃষকদের কাছে তথ্য পেয়ে কৃষি কর্মকর্তারা দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন পানের বরজে ঘুরে ঘুরে রোগ বালাইয়ের কারণ ও ধরন চিহ্নিত করে। পরে কৃষি অফিস থেকে নির্ধারিত কিছু প্রতিষেধক পানের বরজে ব্যবহার করতে বলেন। গত সপ্তাহ থেকে তারা ওই সব প্রতিষেধক ব্যবহার করলেও তাতে কোনো সুফল মেলেনি। ফলে লোকসানের শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ জুন) উপজেলার বিভিন্ন মাঠে পানের বরজ ঘুরে দেখা গেছে, কচি সবুজ হয়ে গজানো পান পাতায় হঠাৎ কালো কালো দাগ পড়ছে। দিন গড়িয়ে রাত, পরদিন সকালে বরজে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ওই পান পাতার কোনোটি পচে যাচ্ছে আবার কোনোটি শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মাঠে মাঠে এই মড়ক দেখা দিয়েছে।

কৃষকেরা কৃষি অফিস অনুমোদিত বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছ থেকে স্কোর, এমিস্টার টপ, টিল্টসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিষেধক নিয়ম মেনে ব্যবহার করছে। তবে ফল পাচ্ছেন না। বিভিন্ন পানের বরজে গিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরিদর্শন করতেও দেখা যায়। তবে তারা বালাইয়ের ধরন দেখে রোগ সম্পর্কে এখনো তেমন কিছু বলতে পারছেন না।

উপজেলার কেশরহাট পৌর এলাকার কৃষক কাশেম উদ্দিন ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, ‘পান পাতায় হঠাৎ কালচে দাগ দেখা যাচ্ছে, কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তা পচে যাচ্ছে। শুধু পাতায় নয়, গাছের গোড়ায় একই ধরনের রোগ দেখা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দুই সপ্তাহ পর এলাকার বরজে কোনো পান গাছ বেঁচে থাকবে না।’

উপজেলার ধুরইল গ্রামের পান চাষি শফিকুল ইসলাম ইউনিভার্সাল২৪নিউজ-কে বলেন, ‘বরজে রোগ দেখে আমিসহ কয়েকজন চাষি উপজেলা কৃষি অফিসে জানিয়েছিলাম। তারা বরজ পরিদর্শন করে অনুমোদিত কিছু কীটনাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। সেগুলো ৫/৬ দিন ব্যবহার করছি। কোনো কাজেই আসছে না। বিষয়টি কৃষি অফিসে জানালে, তারা সুফল পেতে আরও কিছুদিন ব্যবহার করতে বলছেন। কিন্তু ততদিনে তো বরজ উজাড় হয়ে যাবে।’

আরেক চাষি রায়হান বলেন, ‘আমরা কীটনাশক ব্যবহারে সুফল পাচ্ছি না, এটি জানানো হলে বিভিন্ন কৃষি অফিস অনুমোদিত কোম্পানির লোকজন প্রতিদিনই বরজে আসছে। তারা দেখেশুনে আবার সেই একই ওষুধ দিচ্ছে।’

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোছা. রহিমা খাতুন ইউনিভার্সাল২৪নিউজ-কে বলেন, ‘হঠাৎ করে বরজে রোগ-বালাইয়ের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি জানার পর থেকে মাঠে নেমে পরামর্শ দিচ্ছেন সকল উপ-সহকারী কৃষি অফিসারগণ। নির্ধারিত প্রতিষেধক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাতে দ্রুত সুফল আসবে বলে আশা করছি।’


শর্টলিংকঃ