যে কারণে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ


ইউএনভি ডেস্কঃ

বাংলাদেশে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে জেলেরা ট্রলার ও বোটভর্তি করে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরছেন। আর বাজারগুলো সয়লাব হয়ে গেছে ইলিশে। দামও তুলনামূলকভাবে গেছে কমে।


দাম কমে এমন জায়গায় এসেছে, গত কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ এমন দামে ইলিশ কেনার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। খবর বিবিসির। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৬৫ দিন ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে তারও অনেক আগে থেকেই বন্ধ হয়ে যায় ইলিশ মাছ ধরার স্বাভাবিক কার্যক্রম। এত দীর্ঘ বিরতির পর ২৩ জুলাই রাত থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জেলেরা ট্রলার ও বোট বোঝাই করে ইলিশ ধরতে থাকেন।

দীর্ঘসময় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সেই সঙ্গে এ বছরের বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণে নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে এবং ইলিশ আগের চেয়ে বেশি ধরা পড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার পর্যায়ক্রমে কিছু পদক্ষেপ হাতে নেয়ার কারণে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলে মনে করেন ইলিশ গবেষক নিয়ামুল নাসের। সবার আগে তিনি জাটকা ও মা ইলিশের বিচরণক্ষেত্র সংরক্ষণের বিষয়টি তুলে আনেন।

ইলিশ মাছের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে আসছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ আদেশ অমান্য করলে কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এ কারণে এখন আর আগের মতো বছরব্যাপী অবাধে ইলিশ আহরণের সুযোগ নেই।

ইলিশের উৎপাদন বাড়ার কারণ হিসেবে নাসের জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নদীর পানির গুনাগণ ও প্রবাহ ইলিশ প্রজননের জন্য এখনও অনুকূলে আছে। এ কারণে ডিমওয়ালা মা ইলিশ সাগর থেকে স্রোতযুক্ত মিঠাপানির নদীতে এসে ডিম ছাড়ে।

তিনি বলেন, ইলিশ মাছ জুলাই মাসের দিকে সমুদ্র থেকে নদীতে আসতে শুরু করে। এ সময় তারা পদ্মার দিকেই আসে। কারণ পদ্মার পানির স্তর ও গভীরতা অন্য নদীর চাইতে তখন বেশি। এ কারণে এত বেশি মাছ পাওয়া যায়।

এ ছাড়া সামুদ্রিক নিম্নচাপ ও সাইক্লোনের একটা প্রভাব থাকার কারণেও ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  কেননা ওই সময়টায় জেলেরা ট্রলার নিয়ে মাছ ধরতে যেতে পারে না। এই সময় ইলিশ বাড়ার সময় পায়।

তবে নদীর প্রবাহ ও গভীরতা দিন দিন কমে আসার কারণে এই ইলিশের আহরণ টেকসই থাকবে কিনা সেটি নিয়েও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রথমত বাংলাদেশের এই নদীগুলো প্রচুর পলি বয়ে আনায় নদীর তলদেশ প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে।

এভাবে পলি জমতে জমতে যদি নদীর গভীরতা ও পানিপ্রবাহ কমে যায়, তা হলে ইলিশ আর নদীতে আসতে চাইবে না বলে আশঙ্কা ইলিশ গবেষকদের। এই ইলিশ মূলত সমুদ্র থেকে ছোট ছোট শাখা নদীর মাধ্যমে বড় নদীগুলোয় প্রবেশ করে। সেই ছোট শাখার অনেকগুলো পলি জমে বন্ধ হতে থাকায় ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


শর্টলিংকঃ