যে কারণে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান


ইউএনভি ডেস্ক:

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট, ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সান সু চিসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়েছে। সোমবার ভোরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের তুলে নিয়ে যায়।

গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর আজ দেশটিতে নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার আগমুহূর্তে ক্ষমতাসীন নেতাদের আটক করা হল। খবর এএফপি, আলজাজিরা ও বিবিসির।

যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিসহ আটক সব নেতার মুক্তি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াও সেনবাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা দেশব্যাপী।

সু চিসহ দেশটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটকের কারণ হিসেবে সেনাবাহিনী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ‘কারচুপির অভিযোগকে’ সামনে এনেছে।

গত বছরের ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি ভূমিধ্বস জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন।

কিন্তু সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) ভোটে প্রতারণার অভিযোগ তুলে ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। দলটি নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি তোলে। তারপর থেকেই দেশটিতে ফের সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নভেম্বরের নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় সোমবার দেশটিতে নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন বসার কথা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী এই অধিবেশন স্থগিতের দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন এনএলডি পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরু করার বিষয়ে প্রত্যয়ী ছিল। এ কারণে ভোরের আলো দেখার আগেই নেতাদের আটক করা হল।

সামরিক বাহিনী পরিচালিত টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিও ভাষণে বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি এক বছর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন। আর সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মিন্ট সুয়েকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

দেশটির বেসামরিক সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে এসব ঘটনা ঘটল।

এনএলডির মুখপাত্র মিও নয়েন্ট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও দলের অন্যান্য নেতাদের সোমবার ভোরে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। এনএলডির মুখপাত্র মিও নয়েন্ত নিজেও গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এনএলডির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হান থার মিন্টকেও আটক করা হয়েছে। সৈন্যরা দেশের বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাদের আটক করে নিয়ে যায় বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাজধানী নেইপিদো ও প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনের সড়কে তারা সেনাবাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখেছেন।

প্রধান প্রধান শহরগুলোতে মোবাইল ইন্টারনেট এবং কিছে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এমআরটিভি জানিয়েছে যে তারা কিছু কারিগরি সমস্যার মুখে পড়েছে এবং তাদের সম্প্রচার বন্ধ রয়েছে।

মিয়ানমারে ২০১১ সাল পর্যন্ত সামরিক জান্তা ক্ষমতায় ছিল। জান্তা শাসনের সময় সু চি অনেক বছর ধরে গৃহবন্দী ছিলেন। পরের নির্বাচনে এনএলডির সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সু চি।


শর্টলিংকঃ