খননের পর এখন কানায় কানায় ভরা পাগলা নদী


নিজস্ব প্রতিবেদক:

যৌবন ফিরে পেয়েছে পাগলা নদী। দীর্ঘ সময় পরে এই পাগলাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন নদীপাড়ের মানুষেরা। শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ এলাকা দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে নদীটি। এক সময় ভরাট হয়ে গেলেও সম্প্রতি খননের পর পানির প্রবাহ ফিরেছে নদীটিতে ।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এটিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডেল্টাপ্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তৈরি করা হয় খনন প্রকল্প। সেটিকে ‘৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পে রাখা হয়। পাগলা নদী খনন প্রকল্পের সঙ্গে সাড়ে ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচটি খালও আছে। সবগুলো প্রকল্পের কাজ শুরু হয় গেল বছরের এপ্রিলে। পাগলা নদী খনন এখন শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে যৌবন ফিরে পেয়েছে নদীটি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, নদীটি নির্ধারিত সময়ে খননে ছয়টি প্যাকেজে বিভক্ত করা হয়। এরপর উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদী পুনঃখননের কাজ পায়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী নভেম্বর পর্যন্ত। তবে এরই মধ্যে খননের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। অল্প কিছু কাজ বাকি।


অথচ খননের কাজটি মোটেও সহজ ছিল না বলে জানিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। নদীগর্ভ দখল করে ইটভাটা নির্মাণ, চাষাবাদ এবং নদীপাড়ে স্থায়ী-অস্থায়ী স্থাপনা গড়ে তুলেছিলেন অবৈধ দখলদাররা। তারা নদী খনন কাজে বাধা দেয়।

স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসন এবং পাউবো কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় দখলদারদের উচ্ছেদ করে হারিয়ে যেতে বসা নদীটি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রস্থে ৩৫ মিটার করে খনন করা হয়েছে দৈর্ঘ্যরে ৪১ কিলোমিটার। গড়ে গভীর করা হয়েছে অন্তত ৯ মিটার।

নদীর ওপর রেহাইচর এলাকায় নির্মিত হচ্ছে একটা ব্রিজ। শনিবার সকালে সেই ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আফসার আলী বলছিলেন, বর্ষার কয়েকমাস ছাড়া সারাবছর পায়ে হেঁটেই নদী পার হওয়া যেত। কিন্তু বর্ষাকালে একটু বেশি পানি থাকত। যার কারণে ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। নদীটাও খনন করা হলো। এখন নদীতে থৈ থৈ পানি। ব্রিজও হলো। আমরা খুব উপকৃত হলাম।

সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, এক সময় পাগলা নদী প্রচণ্ড খরস্রোতা ছিল। ধীরে ধীরে নদীটি মরে যায়। এবার খননের ফলে নদী তার নাব্যতা ফিরে পেয়েছে। এরপর এবার নদীপাড়ের মানুষ যে পরিমাণ মাঝ ধরেছেন তা বিগত ২০-৩০ বছরেও পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, নদীর পানি ব্যবহার করে দুই পাড়ে চাষাবাদও হচ্ছে খুব ভালভাবে। নদীটি যদি আগামীতেও এমনই থাকে, তাহলে বাংলাদেশ যে নদীমাতৃক দেশ তা এখানে ফুটে উঠবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, পাগলা নদী খননের ফলে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে মাছ বেড়েছে। এখন আমরা নদীর দুই পাড়ে বৃক্ষরোপণ করব। পাশাপাশি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এতে নদীপাড়ের সৌন্দর্য্যও বাড়বে।
তিনি বলেন, আগে নৌপথই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেত। এখন নদীর নাব্যতা ফিরে আসায় একটা নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কিনেছি। সেটা এই নদীতে চলবে। চরাঞ্চল থেকে রোগী আনার জন্য আমরা আরেকটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স কিনছি। সেটা দিয়ে ২০ মিনিটের মধ্যে চর থেকে রোগী এপারে আনা যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, নদী খনন প্রকল্পের ৯০ শতাংশেরও বেশি কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। এরই মধ্যে নদীতে পানি এসেছে। প্রতিবছরই এখন পানি থাকবে। এই পানিটা এখন ধরে রাখতে হবে। সে জন্য একটা ড্যাম নির্মাণ করতে হবে। তাহলে বর্ষা শেষে পানিটা আবার নেমে চলে যাবে না। এতে জেলাবাসী সুফল পাবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি জামাত খান বলেন, খননের ফলে পাগলা নদী তার পুরনো রূপ ফিরে পেয়েছে। এখন পানির প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে নদীপাড়ের জীবন-জীবিকা ও কৃষিকাজে খুব ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এভাবে যদি শুকিয়ে যাওয়া সব খাল ও নদী-নালা খনন করা হয় তাহলে নাদীমাতৃক বাংলাদেশের আসল রূপ ফুটে উঠবে।


শর্টলিংকঃ