- ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ - https://universal24news.com -

রাজনীতি একটা লাভজনক ব্যবসা : রুমিন ফারহানা


বাংলাদেশে রাজনীতির চেয়ে লাভজনক ব্যবসা আর নেই। এখানে খালি হাতে এসে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়। এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘ব্যাংক খাত নিয়ে উল্টাপাল্টা পদক্ষেপ বন্ধ করুন : ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠন করুন’ শীর্ষক বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন।

বৈঠকে সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক এমডি আবু নাসের বখতিয়ার, অধ্যাপক আবু সাঈদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

রুমিন ফারহানা বলেন, সংসদের ৬১ শতাংশ ব্যবসায়ী দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ রাজনীতি এখন সবচেয়ে বড় লাভজনক ব্যবসা। বাংলাদেশে রাজনীতির চেয়ে লাভজনক ব্যবসা আর নেই। এখানে খালি হাতে এসে হাজার কোটি টাকার মালিক হওয়া যায়। বিদেশে টাকা পাচার করা যায়। এজন্য মন্ত্রী-এমপি হতে হবে তা-ও নয়। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে থাকলেই হয়। যার বড় উদাহরণ যুবলীগের সম্রাট।

‘বর্তমান সরকার ব্যাংক লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি’ দাবি করে এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক ভালোভাবে চলছিল। সেটি ধ্বংস করা হয়েছে। এর পেছনে বারবার ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর কথা উঠে এসেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। কারণ বাচ্চু প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক।’

‘এক যুগ্ম সচিব অর্থ মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া তিনি (বাচ্চু) কাউকে পরোয়া করেন না। বিভিন্ন জায়গায় বলে থাকেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছের লোক তিনি (বাচ্চু)। সেই আব্দুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’

সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের সমালোচনা করে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি (মুহিত) বলেছিলেন, ব্যাংক খাতে পুকুর নয়, সাগর চুরি হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক দেয়া হচ্ছে। তারপরও ওই অর্থমন্ত্রী পদে কেন ছিলেন?’

এমপি রুমিন আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এ সরকার দেশের শেয়ারবাজারকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী বলেছেন, শেয়ারবাজার হলো ফটকাবাজার। হল-মার্কের চার হাজার কোটি টাকা কিছুই না। এ ধরনের অর্থমন্ত্রী ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়ে আমরা চলি। তাদের নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কিছু দেখি না। যেখানে রাজনীতিবিদ, আমলা, মন্ত্রী, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী- সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। তাই সংসদের ৬১ শতাংশ ব্যবসায়ী দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

তিনি বলেন, ‘আমি সংসদে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এখন মানুষ মারার বিচার থেকে শুরু করে মশা মারার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করতে হয়। এটি কেন? আমি এজন্য এটি জিজ্ঞাসা করেছিলাম কারণ বাংলাদেশে এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছাড়া ব্যাংক, মানুষ হত্যার বিচার, শুদ্ধি অভিযান, ক্যাসিনো বন্ধ- কোনোটাই বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই আমরা যতই সুপারিশ দেই, লেখালেখি করি আসল জায়গা থেকে নির্দেশনা না এলে কোনো কাজ হবে না।’

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মইনুল ইসলাম। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর টোটকা দাওয়াই দিয়ে খেলাপি ঋণের ক্যানসার সারানো যাবে না। ঋণখোলাপি সমস্যা সমাধানে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। একই সঙ্গে খেলাপিদের সামাজিকভাবে বয়কটের পাশাপাশি তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দেশের গণতন্ত্র কোথায় গেছে আপনারা সবাই জানেন। এখন দেশের মালিক বনে গেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ। বুয়েটে মেধাবী ছাত্রকে হত্যা করা হলো, ভিসি ক্যাম্পাসে এলেন অনেক পড়ে। তার কারণ আছে, যে স্টাম্প দিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে সে স্টাম্পের ভয়তো ভিসিরও আছে। ক্যাম্পাসের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা তার হাতে নেই।

কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্রের কথা বলা আছে, সমাজতন্ত্রের কথা বাদ দিয়ে ঋণখেলাপিতন্ত্রের কথা চালু করা হয়েছে। আমার টাকা ব্যাংকে রাখব আর তারা টাকা চুরি করে নেবে- এটা তো হতে পারে না। দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন, রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা একটা উল্টোপাল্টার মধ্য দিয়ে চলেছে। এ থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, এর বিকল্পও নেই।