রাজশাহীতে অটো চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরালেন মেয়র লিটন


নিজস্ব প্রতিবেদক:

যানজট নিরসন ও জনদুর্ভোগ কমাতে দেশের মধ্যে এই প্রথম রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন স্মার্ট অটোরিকশা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ সোমবার বিেেকল নগরভবনে এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। একইসাথে অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা মালিক ও চালকদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করেন মেয়র।

স্মার্ট অটো রিকশা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের মধ্যে এই প্রথম বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে দুই কালারে সকাল ও বিকেল দুই শিফটে অটোরিকশা চলাচল কার্যক্রম শুরু হলো। আজ থেকে কার্যক্রম শুরু হলেও বাস্তবায়নে এক মাস সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, যানজট নিরসন এবং জনদুর্ভোগ কমাতে দুই শিফটে অটোরিকশা চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে অটোরিকশা ও চার্জার রিকশার সুশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আসার পাশাপাশি চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলো। অনেক চিন্তাভাবনা করে এই উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে, এতে করে চালকরা লাভবান হবেন।

মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীতে দীর্ঘদিনেও শিল্পায়ন হয়নি। ফলে কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। জীবিকা নির্বাহের জন্য বিপুল সংখ্যক মানুষ অটোরিকশা ও চার্জার রিকশার সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় নগরীতে অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চালানোর অনুমতি দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে এটির আধিক্যের কারণে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নীতিমালা প্রণয়ণ করেছে।

মেয়র বলেন, নগরীতে টাউন সার্ভিস বাস পরিচালনার প্রস্তাব আমাকে দেওয়া দেওয়া হলেও অটোরিকশা ও চার্জার রিকশার সাথে জড়িত প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কথা বিবেচনা করে প্রস্তাবটি প্রত্যাখান করেছি। বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত টাউন সার্ভিস বাস নামানোর পরিকল্পনা নেই।

অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চালকদের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক প্রশিক্ষণ প্রদানের ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন হতে এবং আইন মেনে চলতে চালকদের অনুরোধ করছি। মেয়র আরো বলেন, নগরীর খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হুমায়ুন কবির বিপিএম বিপিএম। প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহানা আখতার জাহান। অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাওগাতুল আলম, রাজশাহী মহানগর ইজিবাইক মালিক শ্রমিক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর, মহানগর জাতীয় রিকশা ভ্যান-শ্রমিক সমিতির সভাপতি সভাপতি লিয়াকত আলী, মহানগর ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান রাশেদ। এ সময়

এদিকে অটোরিকশা ও ও চার্জার রিকশা সুশৃঙ্খল ভাবে চলাচলের জন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নিম্নরুপ নীতিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী মাসের ১ম ও ৩য় সপ্তাহে সকাল ৬টা হতে দুপুর ২.৩০টা পর্যন্ত মেরুন রঙের অটোরিকশা এবং দুপুর ২.৩০টা হতে রাত ১০.৩০টা পর্যন্ত পিত্তি রঙের অটোরিকশা চলাচল করবে। মাসের ২য় ও ৪র্থ সপ্তাহে সকাল ৬টা হতে দুপুর ২.৩০টা পর্যন্ত পৃত্তি রং এবং দুপুর ২টা হতে রাত ১০.৩০পর্যন্ত মেরুন রং এর অটোরিকশা চলাচল করবে। তবে শুক্রবার ও সরকারী ছুটির দিনে সারাদিন এবং প্রতিদিন রাত ১০.৩০ থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত উভয় রং এর অটোরিকশা চলবে।

নীতিমালা অনুযায়ী ১০ হাজার অটোরিকশা এবং ৫ হাজার চার্জার রিকশা নিবন্ধন প্রদান করবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন। অটোরিকশা দুই শিফটে চললেও চার্জার রিকশার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। তবে চিকন চাকার চার্জার রিকশার চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা এবং চালকদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ১লা জুলাই ২০১৯ শুরু হয়েছে রাজশাহী সিটি  erajshahi.portal.gov.bd কর্পোরেশনের ওয়েব পোর্টাল  এ প্রবেশ করে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

নীতিমালা অনুযায় যে সকল অটোরিকশা ও চার্জার রিকশার নিবন্ধনের মেয়াদ ৫(পাঁচ) বছর অতিবাহিত হয়েছে তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। যে সকল মালিকগণ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ভোটার নয়/স্থায়ী নাগরিক নয় তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। নতুন নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম বলবৎ থাকবে। একজন মালিকের নামে ৫ টির অধিক অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা নিবন্ধন করা যাবে না।

যে সকল অটোরিকশা ও চার্জার রিকশঅর নিবন্ধন ৫ বছর পূর্ণ হয়নি সে সকল অটোরিকশা ও চার্জার রিকশারর মালিকগণ নবায়ন ফি প্রদান সাপেক্ষে অনলাইন নিবন্ধনের সুবিধা পাবেন। বিদ্যমান নিবন্ধিত চালকগণ নবায়ন ফি পরিশোধ পূর্বক নতুন নিবন্ধন করতে পারবেন। এই সুযোগ ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ১ম কোয়ার্টার জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। অটোরিকশার নিবন্ধন কার্ডের নম্বরের ভিত্তিতে জোড় ও বিজোড় অনুসারে ২ ভাগে বিভক্ত করা হবে। জোড় ও বিজোড় নিবন্ধনধারী অটোরিকশা সমূহ যথাক্রমে মেরুন ও পিত্তি রং (কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিধারিত) বডি ও হুড উভয়ই একই করতে হবে। যানবাহন গুলি নিবন্ধন কার্ড ব্যতিত মহানগর এলাকায় চলাচল করতে পারবে না। এরুপ অনিবন্ধিত যানবাহন আটক করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক বছর কোন অটোরিকশা ও চার্জার রিকশার নবায়ন না হলে তার নিবন্ধন বাতিল বলে গণ্য হবে।


শর্টলিংকঃ