রাজশাহীতে ওমর প্লাজার দখল করা ফুটপাত উচ্ছেদে সাংবাদিকদের আল্টিমেটাম


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রফিকের ওপর এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ‘থীম ওমর প্লাজার’ কর্মীদের হামলার ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা হামলাকারী এবং এর নেপথ্যে যারা আছেন তাদের প্রত্যেকের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। একইসঙ্গে থীম ওমর প্লাজার দখল করা ফুটপাত উদ্ধারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনকে (রাসিক) সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।

সাংবাদিক রফিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি মোড়ে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এসব দাবি জানানো হয়। রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) এর আয়োজন করে। এতে আরইউজে ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি ও রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ রাজশাহীর সর্বস্তরের সাংবাদিকবৃন্দ অংশ নেন। কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের সদস্যরাও এতে অংশ নিয়ে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মশিহুর রহমান বলেন, বর্তমানে যাদের হাতে ক্ষমতা রয়েছে তাদের মধ্যে ক্ষমতা প্রয়োগ করে সাংবাদিকদের দমন করার অভিপ্রায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। আমরা সাংবাদিকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। এর বিচার নিশ্চিতে সব সময় সাংবাদিকদের পাশে আছি।

রাজশাহী সাংবাদিক কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী বলেন, সাংবাদিক রফিকের ওপর হামলার ঘটনা সাধারণ নয়। এটা পরিকল্পিত। এই ব্যাপারে সাংবাদিকদেরও এখন চিন্তা করতে হবে। আমরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাই। তা না হলে এ ঘটনার নেপথ্যে যারা আছেন তারা পার পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর সংকীর্ণ একটা রাস্তার পাশে ফুটপাত দখল করে কীভাবে এতা বড় ভবন নির্মাণ হলো সেটাও এখন তদন্ত করে দেখার সময় এসেছে।

রাজশাহী ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি মামুন অর রশিদ বলেন, হামলাকারীরা জেনে শুনে পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক রফিককে পিটিয়েছে। এর নেপথ্যে যারা কলকাঠি নেড়েছেন আমি তাদের ধিক্কার জানাচ্ছি, ঘৃণা জানাচ্ছি। সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে লাভ নেই, চোখ রাঙিয়েও লাভ নেই। এসব করলে সব সাংবাদিকরা একত্রিত হয়ে কলম দিয়েই এর প্রতিবাদ জানাবে।

বিএফইউজের সদস্য জাবীদ অপু বলেন, সারাশহরে ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলছে। কিন্তু নগর ভবনের পেছনেই থীম ওমর প্লাজা সংকীর্ণ রাস্তার ফুটপাত দখল করে রেখেছে। মেয়রের প্রতি আহ্বান জানাই, হাজারও মানুষের ঘর ভাঙার আগে একটি ফুটপাত উচ্ছেদ করুন।

আরইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিবলী নোমান বলেন, থীম ওমর প্লাজার সামনে অনেক মানুষ সেখানকার নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হন। কিন্তু সাংবাদিক রফিকের ওপর হামলা অন্য ঘটনাগুলোর মতো নয়। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তার মাথার হেলমেট কেড়ে নিয়ে লোহার রড, লাঠি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করা হয়েছে। এর আগে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের অব্যাহতভাবে হুমকি ধামকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই হুমকি আর হামলা করে রাজশাহীর সাংবাদিকদের দমিয়ে রাখা যাবে না। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ আছে। অতীতে বাংলা ভাই পারেনি, অন্য কোনো অশুভ শক্তি বর্তমানেও পারবে না। ভবিষ্যতেও নয়।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আরইউজের সভাপতি কাজী শাহেদ। তিনি বলেন, রাজশাহীর পাঁচজন সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছিলেন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। বলেছিলেন, এদের গায়েব করে দেয়া হবে। এই পাঁচ সাংবাদিকের মধ্যে রফিকও ছিলেন। তার ওপর ফারুক চৌধুরীর কর্মীরা হামলা করেছে। তাই আমরা মনে করি, ফারুক চৌধুরীর ইন্ধনেই এই হামলা হয়েছে। হামলার সময় তিনি কোথায় ছিলেন সেটা তদন্ত করে দেখার জন্য আমি আহ্বান জানাই।

তিনি বলেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী আগে সাংবাদিকদের কাছে এসে ‘ম্যাও ম্যাও’ করতেন। হাত পা ধরতেন। এখন বাঘ হয়েছেন। আপনার আচরণ সংশোধন করুন। তা না হলে রাজশাহীর কোনো গণমাধ্যমকর্মী আপনার পাশে থাকবে না। তখন আপনার নিজের জায়গাও ঠিক থাকবে না।

রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের উদ্দেশ্যে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর থীম ওমর প্লাজার জন্য ফুটপাত দখল করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে আপনি এই ফুটপাত দখলমুক্ত করে সাধারণ মানুষকে বুুঝিয়ে দেবেন। তা না হলে আমরা মনে করব, আপনি সাংবাদিকদের সঙ্গে নেই, রাজশাহীর মানুষের সঙ্গে নেই, আপনি এমপির পক্ষে আছেন।

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান শ্যামল। তিনি এমপি ফারুক চৌধুরীর প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর কর্মীরা সাংবাদিক রফিককে হত্যার উদ্দেশ্যেই রড দিয়ে পিটিয়েছিল। অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচেছেন। আর একবার এ ধরনের হামলা হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।

মানববন্ধন কর্মসূচি পরিচালনা করেন আরইউজের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হক। তিনি বলেন, সাংবাদিকের গায়ে হাত তুলে গোলাম মাওলা রনি, জয়নাল হাজারী ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। এখন ওমর ফারুক চৌধুরী কলম সৈনিকদের হুমকি দিচ্ছেন। তার উদ্দেশ্যে বলি, চোখ রাঙাবেন না। আমরা ভয় পাই না। চোখ রাঙালে আপনারও পরিণতি ভালো হবে না।

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন, আরইউজের সহসভাপতি শরীফ সুমন, রাজশাহী ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ, সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুয়ারা খাতুন, সিনিয়র ফটোসাংবাদিক আজাহার উদ্দিন, সেলিম জাহাঙ্গীর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মর্তুজা নূর, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূর প্রমুখ।

অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র সাংবাদিক জিয়াউল গনি সেলিম, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ দৌলা, নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম রফিক, আরইউজের যুগ্ম সম্পাদক সাইফুর রহমান রকি, কোষাধ্যক্ষ সরকার দুলাল মাহবুব, নির্বাহী সদস্য মিজানুর রহমান টুকু, সামাদ খান, আরইউজে সদস্য তবিবুর রহমান মাসুম, সাংবাদিক কাজী নাজমুল ইসলাম, সুজাউদ্দিন ছোটন, এম এ আমিন, রিমন রহমান প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার সকালে মাছ কিনতে গিয়ে রাজশাহী নিউমার্কেট এলাকায় রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন বহুতল ভবন থীম ওমর প্লাজার সামনে মোটরসাইকেল রাখেন সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম। এ সময় ভবনের নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে অশালীন ভাষায় কথা বলেন। রফিকুল ইসলাম তখন নিজের পরিচয় দিলে তাকে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ এবং সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করেন। এ নিয়ে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক। পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।


শর্টলিংকঃ