রাজশাহীতে কমিউনিটি পুলিশের সভাপতির ছেলের অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা


বিশেষ প্রতিবেদক :
অস্ত্র ব্যবসায়ী মাসুদের বাবা ফারুক হোসেন রাজশাহীতে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমে অনবদ্য অবদান রাখায় ২০১৯ সালে পুলিশের পক্ষ থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত ওই সম্মাননাপত্রে ফারুক হোসেনের প্রশংসা করা হয়েছে‌।

রাজশাহীতে কমিউনিটি
পিস্তল ও গুলিসহ গ্রেফতার মাসুদ রানা

রাজশাহীতে দুইটি দেশীয় পিস্তল ও গুলিসহ মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মাসুদ রানাকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। মঙ্গলবার নগরীর শাহমুখদুম থানার মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাসুদ ১৮ নম্বর ওয়ার্ড (উত্তর) যুবলীগের বহিস্কৃত সভাপতি। সে পবা নতুনপাড়া এলাকার ফারুক হোসেনের ছেলে। মাসুদের বাবা ফারুক হোসেন শাহ মখদুম থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি।

স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, শাহমখদুম থানার মোড়ে দোকান রয়েছে মাসুদের। তার দোকানের পাশেই বিপা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস। ওই ওয়ার্কশপের মালিককে ফাঁসাতে মাসুদ র‌্যাবকে খবর দেয়, বিপা ওয়ার্কশপে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি মজুদ রাখা হয়েছে। তার দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে বিষয়টি সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজনসহ মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মাসুদ স্বীকার করে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এর মালিককে ফাঁসাতেই সে ওই দোকানে অস্ত্র লুকিয়ে রেখে র‌্যাবকে খবর দিয়েছিল।

রাজশাহীতে কমিউনিটি
পুলিশের আইজি ড. জাবেদ পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত সম্মাননাপত্র

তবে অভিযান সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি র‌্যাবের কর্মকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর শাহমখদুম থানার মোড়ে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসপে অপারেশন পরিচালনা করে র‌্যাব। এ সময় অস্ত্র ব্যবসায়ী মাদুস রানাকে ২ টি দেশীয় তৈরী পিস্তল ২ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগর শাহমখদুম থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসার পাশাপাশি জুয়ার বোর্ড, জমি দখল, নির্মনাধীন বিল্ডিং এ চাঁদাবাজিতে জড়িত মাসুদ। দীর্ঘদিন সে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে। তার এসব অপকর্মের জন্য একটি সিন্ডিকেটও গড়ে তুলেছে মাসুদ। তার এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত সোহাগ ও শিবির রাসেল। এদের দিয়েই সে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে।

রাজশাহীতে কমিউনিটি
র‍্যাবের অভিযান

গত সোমবার আরডিএ ভবনের সামনে এই মাসুদের নেতৃত্বে সাবেক শিবির কর্মী সবুজ, আশরাফ, শুভ, মাসুদের ভাগিনা ফাহিম ও নয়নসহ বেশ কয়েকজন মিলে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে দুই যুবলীগ কর্মীকে আহত করে। আহত যুবলীগ কর্মীর মমিন পপেল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।

এছাড়াও বেশ কিছুদিন আগে রাজশাহী নগরীর গুলশান হোটেলে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয় মাসুদের এক সহযোগী বোয়ালিয়া মডেল থানার তৎকালীন এক এস আই মহিউদ্দিন শেখ তাকে গ্রেফতার করেন। ওই মামলায় জামিনে বেরিয়ে আবার সে ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এছাড়া গত ২৬ মে মাসুদের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পরিচিত ও তার কমিটিরই যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হোসেনকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। নগরীর শালবাগান এলাকায় ইয়াবা বিক্রির সময় হাতেনাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছে ৩৬ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। সে নগরীর পবা নতুনপাড়া এলাকার মোসলেম উদ্দিনের ছেলে।

মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মাসুদ রানা
মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মাসুদ রানা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা ইউনিভার্সাল২৪নিউজ-কে জানান, এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত মাসুদকে গ্রেফতারের পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন পুলিশের অনেকেই। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মাসুদকে আটক করা হলেও তার বাবা ফারুক হোসেন শাহমখদুম থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি হওয়ায় তদবির করে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। নিয়েও বিব্রত ছিল পুলিশ।

এ বিষয়ে র‍্যাব-৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোর্শেদ জানান, মাসুদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের পর মামলা দায়ের করে শাহমখদুম থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন মান্দায় ক্রসফায়ারে মাদক কারবারি নিহত


শর্টলিংকঃ