রাজশাহীতে নেই করোনা নির্ণয়ের কীটস!


ইউএনভি ডেস্ক:

করোনাভাইরাসে বিশ্বের একটার পর একটা দেশ আক্রান্ত হচ্ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। বাংলাদেশের তিনজনের শরীরে সনাক্ত হয়েছে করোনাভাইরাস। এ অবস্থায় দেশের উত্তরের জনপদ রাজশাহীতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস মোকাবেলায়। ইতোমধ্যেই আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ৩৫ বেডের একটি করোনা ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও গঠন করা হয়েছে তিনটি মেডিকেল টিম। তবে রাজশাহীতে নেই করোনাভাইরাস রোগ নির্ণয়ের জন্য কীটস ও থার্মাল স্ক্যানার।

করোনা ওয়ার্ড
করোনা ওয়ার্ড

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস বলেন, সোমবার সকালে করোনাভাইরাস বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। সেখানে করোনাভাইরাস মোকাবেলার নিয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশে রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ৩৫ বেডের করোনা ওয়ার্ড করা হয়েছে। যারা আক্রান্ত হবেন তাদের সেখানে রেখে চিকিৎসা দেয়া হবে। এছাড়াও সন্দেহভাজনদের রাখার জন্য মহিলা ক্রিড়া কমপ্লেক্স প্রস্তুত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: মাস্কের দামে আগুন: ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ হাইকোর্টের

সাইফুল ফেরদৌস বলেন, এই বৈঠকে তিনটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি টিমে তিনজন করে চিকিৎসক রয়েছে। এর একটি টিম কাজ করে সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালে স্থাপিত করোনা ইউনিটে, অপরটি টিম কাজ করে মহিলা ক্রিড়া কমপ্লেক্সে এবং আরেকটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগে।

রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক বলেন, রাজশাহীতে করোনাভাইরাস রোগ নির্ণয়ের জন্য কীটস ও থার্মাল স্ক্যানার এখনো পাওয়া যায়নি। দুই সপ্তাহ আগেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্দেহভাজনদের জন্য পাঁচটি বেড এবং সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে আক্রান্তদের জন্য পাঁচ বেডের স্বতন্ত্র দুইটি করোনো ইউনিট করা হয়েছিল। সে সময় রোগ নির্ণয়ের জন্য কীটস ও থার্মাল স্ক্যানারের চাহিদা পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাজশাহীতে আসেনি করোনাভাইরাস নির্ণয়ে কীটস ও থার্মাল স্ক্যানার।

তিনি সাইফুল ফেরদৌস বলেন, সন্দেহভাজন রোগী পাওয়া গেলে তার নমুনা সংগ্রহ করে মহিলা ক্রিড়া কমপ্লেক্সে রাখা হবে। পরে সেই নমুনা ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নির্নয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রে (আইইডিসিআর) পাঠানো হবে। সেখান থেকে রোগ নির্মাণ করে তারা আমাদের জানাবে। এর পর কারও শরীরে করোনা সনাক্ত হলে তাকে সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালে নেয়া হবে বলে জানান এই হাসপাতাল কর্তকর্তা।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা: গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য বলেন, বাংলাদেশে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব পাওয়া গেছে। রোববার সেটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে দুই সপ্তাহ আগেই আইইডিসিআর করোনাভাইরাস নিয়ে রেড আলার্ট জারি করেন। তখন থেকেই আমরা প্রস্তুতি শুরু করি। বিভিন্ন পর্যায়ে সভা করে করোনাভাইরাস, এর ভয়াবহতা ও এ থেকে কিভাবে বাঁচা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সবগুলো হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ থেকে ১০টি পর্যন্ত বেডের করোনা ইউনিট করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিভাগের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ের কমিটিতে জেলা প্রশাসককে আহবাক ও সিভিল সার্জন সদস্য সচিব হয়েছেন। আর উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহবায়ক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সদস্য সচিব। এসব কমিটি জনসচেতনাতাসহ করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ও সনাক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষপ নিবে। ইতোমধ্যে কমিটিগুলো জনসচেতনা মূলক কাজ শুরু করে দিয়েছে বলেও জানান স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।

এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের উদ্যাগে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও মোকাবেলায় প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হলেও নেই তেমন প্রচার-প্রচারণা। প্রচার-প্রচারণা ও সচেতনতার অভাবে সাধারণ মানুষ রয়েছে আতঙ্কে। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে কিছুটা মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে।

তবে আতঙ্কিত না হয়ে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উপর জোর রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মাহাবুবুর রহমান খান বাদশা বলেন, এটি সাধারণ একটি ভাইরাস রোগ। সর্দি, কাশি ও অন্যান্য কারণে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, এই ভাইরাস নিয়ে আমরা তেমনভাবে আতঙ্কিত নয়। কারণ ভাইরাসের সাধারণ একটি মৌসুম থাকে, মৌসুম শেষ হলে ভাইরাস মরে যায়। চীনে এখন ভাইরাসটি কমে যাচ্ছে। মৌসুম শেষ হলে সাধারণত এক মাসের মাথায় ভাইরাসটি তেমন ভাবে বিস্তার লাভ করতে পারে না, মরে যায়। বাংলাদেশে এই ভাইরাস ছড়ানোর মৌসুম পার হয়ে গেছে। তবে সবাইকে সচেতন থাকবে হবে বলে পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।


শর্টলিংকঃ