রাজশাহীতে নোটিশ কাজে আসছে না, ৯০ ভাগ দোকানে অবৈধ বিজ্ঞাপন


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীতে প্রদর্শিত তামাকের বিজ্ঞাপন অপসারণে তামাক কোম্পানিগুলোর পরিবেশক/সত্বাধিকারী বরারর চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর নোটিশ জারি করেছিলো জেলা প্রশাসন। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ২৭৩৬টি তামাকপণ্যের ৯০% দোকানে তামাকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আইন বহির্ভুত অবৈধ বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা ও পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে।

দাতা সংস্থা ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স-সিটিএফকে’ এর সহযোগিতায় রাজশাহীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র রাজশাহী মহানগরীতে পরিচালিত ‘তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা’ শীর্ষক এক জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের ভয়াবহ এ চিত্র উঠে আসে।

গতকাল বুধবার (০৪ ডিসেম্বর ২০১৯) সকালে নগরীর একটি রেঁস্তোরার সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মহানগরীর ২৭৩৬ টি তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রের (ঢ়ড়রহঃ ড়ভ ংধষবং) মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪২৪ টিতে পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন উঠে আসে।
এসিডি’র নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিফাতুল ইসলাম।

‘এসিডি’র মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুলের উপস্থাপনায় এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন- ‘এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক শরীফ সুমন ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ। এসময় অন্যদের মধ্যে এসিডি’র ডিরেক্টর (ফিন্যান্স) পংকজ কর্মকার, প্রোগ্রাম অফিসার কৃষ্ণা রাণী বিশ্বাস, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ‘তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার, প্রণোদনা’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদন পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করেন ‘এসিডি’র এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিফাতুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে রাজশাহীতে মাঝেমধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। তামাক কোম্পানির অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে আরও বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।’ রাজশাহী সিটিকে ধূমপানমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে এসময় সাংবাদিকদের বেশি বেশি সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে এসিডির নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো তামাক আইন লঙ্ঘন করে মৃত্যুর বিপনন করছে। তামাক কোম্পানিগুলো যাতে রাজশাহীতে তাদের অবৈধ বিজ্ঞাপন ও প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

বক্তারা বলেন, রাজশাহীকে ধূমপানমুক্ত সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের বিনোদনকেন্দ্রসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রগুলো, হাসপাতাল চত্ত্বর, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বিমান বন্দরকে আগে ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৭৩৬টি তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১৭১১ (৬২.৫৩%) টি বিক্রয়কেন্দ্রের কোনো লাইসেন্স নেই। নির্বাচিত তামাকপণ্যের দোকানগুলোর মধ্যে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ পোস্টার/স্টিকার/সাইনবোর্ড/ব্যানার রয়েছে ৪৯.৮০%; ডামি প্যাকেট/খালি প্যাকেট ৫২.০১%; তামাকপণ্য বিক্রয়ের বক্স/শোকেজ ১৬.১৭%; কোনো কাঠামোর ওপর ব্র্যান্ডের ছাপ দেয়া রয়েছে ১২.৩%; ফ্লাইয়ার/লিফলেট/পেমপ্লেট রয়েছে ২.৪০%।

বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তামাকপণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে (যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ)- স্তরে স্তরে সাজানো তামাকপণ্য (বিক্রয়কেন্দ্রের যেকোনো স্থানে) রয়েছে ৫৫.৯০% দোকানে; ৩৬.১০% দোকানে তামাকপণ্যের ট্রে, টেবিল বা অন্যান্য উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শণ; পাওয়ার ওয়াল (লেনদেন কাউন্টারের দেয়ালের পিছনে প্রদর্শিত সারিবদ্ধ তামাকপণ্য) পাওয়া গেছে ৩.৩০% দোকানে এবং ৪.০০% দোকানে তামাকপণ্যের ঝুলন্ত প্রদর্শণ (ছাদ থেকে ঝুলন্ত প্যাকেট) দেখা গেছে বলে জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া সামগ্রিকভাবে মহানগরীতে তামাকের বিক্রয়কেন্দ্রে আইন লঙ্ঘনের চিত্র দেখা গেছে- আইন বহির্ভুত পণ্য প্রদর্শণ ৭০% দোকানে; বিজ্ঞাপন/প্রণোদনা ৭৭% দোকানে এবং ৯০% দোকানে বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা, পণ্য প্রদর্শণ করতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ধারা ৫ মতে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বই, লিফলেট, পোস্টার, ছাপানো কাগজে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবেন না। এই ধারার উপধারা (ছ) তে বলা হয়েছে- তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে (point of sales) যে কোন উপায়ে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ ধারা লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুনঃ একই ধরনের অপরাধ সংঘটন করিলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দন্ডনীয় হইবেন।


শর্টলিংকঃ