রাজশাহীতে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস পালিত


নিজস্ব প্রতিবেদক:

আলোচনা সভা ও পুস্পার্ঘ অর্পণের মধ্য দিয়ে আজ রোববার রাজশাহীতে পালিত হলো স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস।

 

১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রি ‘মজিদ খানের শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দি মুক্তি ও জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের’ দাবিতে সারাদেশে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’র ব্যানারে তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই দিন পুলিশের গুলিতে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালীসহ সারাদেশে ১১ ছাত্র প্রাণ হারায়।

এই দিবসটি স্বরণে আলোচনা সভার আয়োজন করে সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ,রাজশাহী।কর্মসূচির শুরুতে শহীদ জাফর,জয়নাল,দীপালি সাহা,কাঞ্জন,মোজাম্মেল আইয়ুব সহ সেদিনের সকল শহীদদের প্রতি পুস্পার্ঘ অর্পন ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিরবতা পালন করা হয় ।রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্নার সভাপতিত্বে এবং মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি শরিফুল ইসলাম বাবু,রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী,ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নফিকুল ইসলাম সেল্টু,সাবেক ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ,সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা চুন্না মোর্শেদ,হাবিবুর রহমান বাবু,কামরান হাফিজ,মেরাজুল আলম সেরাজ,রাগিব হাসান,শাহরিয়ার রহমান সন্দেশ,বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাবেক মহানগর সাধারণ সম্পাদক তামিম শিরাজী,বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর ঢাকা মহানগরের সভাপতি ও রাজশাহীর সাবেক ছাত্র নেতা রাকিন আবসার অর্নব,বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর মহানগর সভাপতি বিক্রম আদিত্য বর্মন,বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীর সাবেক মহানগর সভাপতি এএইচএম জুয়েল খান,নগর সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম মিলন, মহানগর ছাত্রমৈত্রীর সহ সভাপতি ইখতিয়ার প্রামাণিক প্রমুখ।


রাকসুর সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না বলেন-‘এই দিনটি আসলে আমাদের শিক্ষার অধিকার আদায়ের দিন, ইতিহাস-ঐতিহ্যের দিন। অথচ যাদের ত্যাগে আমরা এই দিনটি পেয়েছি, তাদেরই ভুলতে বসেছি। আমরা এই দিনটিতে ভালবাসার নামে অপসংস্কৃতি চর্চায় মেতে উঠেছি। এছাড়া মিডিয়াগুলোও এই অপসংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে, ভুলতে চলেছে এই ঐতিহ্যবাহী দিনটিকে। আমরা এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা প্রদানের জন্য আমাদের আন্দোলন চলবে।”

ছাত্রনেতা তামিম শিরাজী বলেন-” প্রজন্ম ভুলে গেছে ৮৩’র ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার লাল গোলাপ নয়,সেদিন ফুটেছিল ছাত্রদের বুকের রক্তে রঞ্জিত রাজপথের রক্তাত্ব গোলাপ।কর্পোরেট সংস্কৃতির প্রবল জোয়ারে সুপরিকল্পিত ভাবে তরুণদের তাদের গৌরবের ইতিহাস থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।ভালোবাসা দিবসের নামে চলছে অপসংস্কৃতি আর প্রবৃত্তি প্রদশর্নের নোংরা কালচার।স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের চেতনা আজ প্রায় হারিয়ে গিয়েছে বলা যায়।স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাত্রনেতারা এবং রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ন পদে আসীন হয়েও স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের চেতনা এই প্রজন্মদের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যার্থ হয়েছে।”

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শফিকুজ্জামান শফিক বলেন-‘স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের আমলে বিতর্কিত শিক্ষানীতির তৈরি করা হয়। কিন্তু ছাত্রসমাজের দাবি ছিল একটি অবৈতনিক বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি।

আর এই দাবি নিয়ে সাধারণ ছাত্রসমাজ প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে জেগে ওঠে। সে মুহূর্তে প্রতিবাদ-সমাবেশে পুলিশ গুলি চালালে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়। এই ঘটনার পর থেকে দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করে ছাত্রসমাজ।’

বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর নেতা রাকিন আবসার অর্নব বলেন- স্বৈরতন্ত্র কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা নয় যে একজন নেতার পতন ঘটিয়ে আরেকজনকে এনে বসিয়ে এই ব্যবস্থার অবসান ঘটানো যাবে৷ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন আজও বিরাজমান।

এবং যতদিন না অব্দি স্বৈরাচারী এই রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে ফেলে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন আন্দোলন চলবে।


শর্টলিংকঃ