রাজশাহীর আমের লাভের টাকা যাচ্ছে বেপারিদের পকেটে


বিশেষ প্রতিবেদক :

ধানের পর এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ফসল আম। তাই এর দাম যাতে মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাতে জিম্মি না হয়ে পড়ে, এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চান কৃষকরা।

রাজশাহীর আমের খ্যাতি দেশজুড়েই। এখন ভরা মওসুমে আম কেনাবেচায় ব্যস্ত কৃষকরা। তবে আশা ছিল-রমজানের পর দাম চাঙ্গা হবে আমের। কিন্তু যে দাম পাচ্ছেন, তাতে সন্তুষ্ট নন বাগান মালিকরা। বাইরে থেকে আসা বেপারিরা সস্তায় আম কিনে নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন বেশ চড়া দামেই। ফলে ন্যায্য দাম নিয়ে হতাশা কাটছে না প্রকৃত চাষীদের।

রাজশাহীতে আমের সবচে’ বড় পাইকারী হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে।নিজের বাগানের আম বেশ যত্ন করেই এ হাটে তুলেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ভ্যানের ওপর ঝুড়িতে আম সাজিয়ে বসে আছেন সকাল থেকে। কিন্তু বিক্রি নেই।

মোয়াজ্জেম হোসেন বলছিলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে আম চাষ করি।কিন্তু আমের পেছনে যে শ্রম ও খরচ হয় তা বিক্রি করে উঠছে না। ফলে আম নিয়ে আমরা বিপদে আছি। বেপারি নেই। আমের ন্যায্য দাম যাতে কৃষকরা পায়। এজন্য সরকারের হস্তক্ষেপ চাই’।

তবে এই হাটে অন্যরা যারা আম বিক্রি করছেন, তাদের মুখেও তেমন হাসি নেই। বাজারে আমের যে দাম পাচ্ছেন, তাতে খুশি নন তারা। বেলপুকুর এলাকার জিল্লুর রহমান জানান, এরইমধ্যে গোপালভোগ আম শেষ। খিরসাপাতও শেষের পথে। তবে শেষমুহূর্তে খিরসা বিক্রি হচ্ছে ২৬০০-২৭০০টাকা মণ দরে। আর ল্যাংড়া আসা কেবল বাজারে এসেছে। দাম ১৭০০-১৮০০টাকা মণ। কিন্তু এই দামে আম বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না।

পোল্লাপুকুরের এক আমচাষী জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার বড় বড় বেপারিরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের বেঁধে দেয় দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। তা না হলে তো আম পঁচে যাবে।

জেলার বাইরে থেকে আসা বেপারিরা হাটে কম দামে আম কিনে বাইরের জেলায় বিক্রি করছেন দ্বিগুণ দামে-এমন কথা অবশ্য স্বীকারও করলেন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ।

ভোলা থেকে আসা বেপারি মুকুল জানান, তারা বানেশ্বর হাটে ৩০টাকা থেকে ৩৫টাকা কেজি দরে আম কিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬০-৭০টাকা করে বিক্রি করেন। তার দাবি, পরিবহন ও শ্রমিক খরচের কারণে এই বাড়তি দাম নেন তারা।

বানেশ্বর হাটে আসা পোল্লাপুকুর এলাকার এক আমচাষী জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার বড় বড় বেপারিরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। তারা এ হাটে এসে আম কিনে। তাদের বেঁধে দেয় দামেই বিক্রি করতে এক রকম বাধ্য হচ্ছি। বেপারিরা কম দামে রাজশাহী থেকে আম কিনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করছে দ্বিগুণ দামে।

এদিকে, ফল গবেষকরা জানিয়েছেন, উপযুক্ত দাম পেতে হলে আমের মানও নিশ্চিত করতে কৃষকদের আরো বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, ভালমানের আমের দাম আছে। যে জাতের আম সেগুলোর দাম চড়া। তবে গুটি জাতের আমের দাম কম। এজন্য কৃষকদের উন্নত জাতের আম চাষের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।


শর্টলিংকঃ