নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে এবার চিংড়ির পেটে জেলি ঢুকিয়ে ওজন বাড়ানোর অভিযোগে দুই মাছ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ এই জরিমানা করেন।
গলদা চিংড়ি ও লম্বা বেগুনের ভুনা একবার খেলে অনেকক্ষণ আঙুল চাটতে হয়। গলদা চিংড়ির লম্বা লম্বা পায়ের ভেতরের অস্থিমজ্জা মসলা দিয়ে মেখে ডুবো তেলে ভেজে খেলে জিহ্বায় স্বাদ লেগে থাকে দীর্ঘ সময়। প্রচলিত আছে, গলদা চিংড়ির মাথার ভূনা ও ঘিলু রান্না দিয়ে ভাত খেলে নাকি কৃষকের সংসারে বছরে এক মণ চাল বেশী লাগতো। এখনো কেউ বেড়াতে এলে বিশেষ আইটেম হিসেবে দেওয়া হয় গলদা চিংড়ির ভুনা। এক সময় কেউ কেউ সরিষা বাটা ও ডালের বেসন দিয়ে মেখে ডুবো তেলে ভেজে অতিথি আপ্যায়ন করে গলদা চিংড়ি দিয়ে। বিয়ের অনুষ্ঠানে জামাইয়ের সামনে পরিবেশন করা হয় বড় বড় গলদা চিংড়ি। মেহমানদের আপ্যায়নেও গলদা চিংড়ি রাখা হয়।
এই সুযোগে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে ওজন বাড়াচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। দেশের ৭০ ভাগ চিংড়ি খুলনাঞ্চল থেকে রপ্তানি হলেও দিন দিন নানা সঙ্কটে এর রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। পুশকৃত চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করায় বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশি চিংড়ির ওপর থেকে আস্থা হারাচ্ছে। যা রপ্তানিতে প্রভাব পড়ছে। বিদেশের বাজার হারিয়ে এই চিংড়ি এখন কম দামে দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে। স্বাদে ভরপুর চিংড়ি খাওয়ার আশায় এসব পুশকৃত চিংড়ি বাজার থেকে অনেকেই না বুঝে কিনছেন। আর এসব চিংড়ি খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন। জেলি পুশ করা চিংড়ি এখন দখল করেছে রাজশাহীর মাছ বাজার।
অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় চিংড়ির দেহে সিরিঞ্জ এর মাধ্যমে ফিটকিরির পানি, ভাতের মাড়, সাগু, এরারুট, লোহা বা সীসার গুলি, মার্বেল, ম্যাজিক বল, জেলিসহ বিভিন্ন ধরনের পদার্থ মেশাচ্ছেন। এর মধ্যে জেলি, সাগু, পাউডার ও সাদা লোহা জাতীয় দ্রব্য গলদা চিংড়িতে বেশি পুশ করা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে ওজন বাড়াতে চিংড়ি পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয়।
পুশকৃত চিংড়ি বোঝার উপায় সম্পর্কে মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, স্বাভাবিক চিংড়ির হাত-পা কুঁকড়ে থাকে, কিন্তু পুশকৃত চিংড়ির হাত-পা ছড়িয়ে থাকে। বাইরে থেকে পুশকৃত চিংড়ি দেখতে একটু মোটা হয়, চিংড়ির গায়ে একটা টনটন ভাব থাকে। এছাড়া চিংড়ির মাথা ভেঙ্গে দেহের অংশে চাপ দিলে পুশকৃত চিংড়ি থেকে পানি বেরিয়ে আসে, জেলি পুশ করা চিংড়ি থেকে একটা পিচ্ছিল পদার্থ বেরিয়ে আসে। পুশ চিংড়ি খেলে লিভার, কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ ইউনিভার্সাল২৪নিউজকে জানান, রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন মাছের বাজারে ওজন বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছে বেশি টাকা আদায়ে চিংড়ির পেটের মধ্যে জেলি ঢুকিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। এরপরই সকালে নগরীর সাহেব বাজার এলাকার কাঁচা বাজারের মাছ পট্টিতে অভিযান শুরু করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসময় মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল ও রিয়াদের কাছে জেলি ঢুকানো চিংড়ি পাওয়া যায়। তবে তারা একটি আড়ত থেকে জেলি পুশ করা চিংড়ি কিনেছেন বলে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেন নি। পরে তাদের ৫হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজারে চিংড়ি মাছ কিনতে আসা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চিংড়ির ওজন বাড়িয়ে বেশি টাকা নেয়ার জন্য জেলি পুশ করছেন। ভাল করে খেয়াল না করলে পুশ করা চিংড়ি চেনা যাবে না।তবে জেলি পুশরা চিংড়ি মাছের মাথা মোটা থাকে। ফলে মাথায় চাপ দিলে আঠা জাতীয় এক ধরনের পদার্থ এমনিতেই বের হয়ে আসে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, ‘রাজশাহীতে জেলি পুশ করা চিংড়ির সন্ধান পেলাম এই প্রথম। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিরিঞ্জের মাধ্যমে চিংড়ির শরীররে জেলি পুশ করে। যা ক্রেতারাদের সঙ্গে প্রতারণা। আগামীতে এধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।