রাজশাহী চিড়িয়াখানায় কুকুরদলের হানা : ৪টি হরিণ সাবাড়


নিজস্ব প্রতিবেদক : 
রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় পাঁচটি ক্ষুধার্ত কুকুর ঢুকে চারটি হরিণ খেয়ে ফেলেছে। শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে সকালেই হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। কুকুরের পেটে যাওয়া চার হরিণের তিনটিই বাচ্চা। একটি তাদের মা।

রাজশাহী চিড়িয়াখানায় ভীত সন্ত্রস্ত হরিণের দল

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে বিকালে চিড়িয়াখানায় সরেজমিনে গেলে সুপারভাইজার শরিফুল ইসলামকে পাওয়া যায়। তিনি ঘটনার কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। এ প্রতিবেদক খবর কোথায় পেলেন সেটিই জানার চেষ্টা করেন বার বার। পরে হরিণের সেডের পাশে পাওয়া যায় মধু নামের একজন পশুর পরিচর্যকারীকে।

হরিণের সেডে কুকুর ঢুকেছিল কোন দিক দিয়ে তা জানতে চাইলেও মধু দেখালেন পূর্ব দিকের বেড়ার অংশ। এ প্রতিবেদকের সামনেই কেঁদে ফেলেন মধু। বলেন, তার কোনো দোষ নেই। মধুর সহজ স্বীকারোক্তির পর অবশ্য সুপারভাইজার শরিফুল ইসলামও স্বীকার করেন বিষয়টি।

তিনি জানালেন, চিড়িয়াখানায় গত তিন মাসে হরিণের ১৫টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। নেড়ি কুকুরের দল ঢোকার সময় সেডে মোট হরিণ ছিলো ৭৫টি। কুকুরে খাওয়ার পর এখন হরিণের সংখ্যা ৭১টি। কুকুরের পেটে যাওয়া চার হরিণের তিনটিই বাচ্চা। একটি তাদের মা। হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ সেডের ভেতরেই মাটি খুঁড়ে পুঁতে ফেলা হয়েছে। জায়গাটি এখনও উঁচু হয়ে আছে।

বেশ কিছু জমি নিয়ে হরিণের সেড করা হয়েছে। এর ভেতর টিন দিয়ে দুটি ঘর রয়েছে। হরিণেরা সেখানে পানি এবং খাবার খায়। ছায়ায় বিশ্রাম করে। বাকি অংশটুকু হরিণের বিচরণের জন্য ফাকা পড়ে আছে। চারপাশে আছে লোহা এবং কাঁটাতারের বেড়া। বিকালে সবগুলো হরিণ ফাকা এক জায়গায় বসে ছিল। হরিণগুলোর চোখে-মুখে দেখা যায় আতঙ্কের ছাপ।

চিড়িয়াখানায় পাঁচটি কুকুর ঢুকে চারটি হরিণ সাবাড় করলেও শুক্রবার বিকালেও ভেতরে কুকুর দেখা গেছে। চিড়িয়াখানায় দ্বিতীয় গেটের বাম পাশে থাকা পুকুরপাড়ে শুয়ে ছিলো একটি কুকুর। চিড়িয়াখানার একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মচারীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বহীনতার কারণেই সেডের ভেতর চারটি হরিণ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক মাহবুব হোসেন েইউনিভার্সাল২৪নিউজকে বলেন, করোনার কারণে সাধারণ ছুটি কাটাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।  তাই তদারকি হয়তো কম ছিল। এ ফাঁকে এই দূ্র্ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে সকালে সিটি কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা পরিচালনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। যোগাযোগ করা হলে চিড়িয়াখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন,  রাত ২টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানার পুকুরে কাজ চলেছে। লোকজন ছিল। তখন পর্যন্ত কুকুর ঢোকেনি। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শহরের হোটেলগুলো বন্ধ থাকায় কুকুরের খাবার সংকট। তাই পাঁচটি নেড়ি কুকুর চিড়িয়াখানায় ঢুকে পড়েছিল। বেড়া থাকলেও কুকুরগুলো হরিণের সেডে ঢুকতে পেরেছিল।

সমর কুমার পাল আরো বলেন, আমরা ধারণা করছি- ক্ষুধার্ত কুকুরগুলো প্রথমে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করেছিল। তাকে বাঁচাতে গিয়েছিল মা হরিণটি। তখন সবগুলোকেই আক্রমণ করেছে কুকুরগুলো। সবগুলো হরিণের দেহের অংশ খেয়ে ফেলেছিল। ভোরে চিড়িয়াখানার কর্মীরা দেখেন হরিণের সেডে পাঁচটি কুকুর। চারটি হরিণের ক্ষতবিক্ষত দেহও পড়ে ছিল। পরে কুকুরগুলোকে বের করে দেয়া হয়। আর হরিণগুলোর দেহের অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ককে একটি লিখিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যেই তিনি প্রতিবেদন দেবেন। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ