রাবিতে কেনা দু’টি কলমের দাম ১১ হাজার টাকা !


নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার এর উন্নয়নে হেকেপ প্রকল্পের ১১হাজার টাকায় কেনা হয়েছে দু’টি কলম। কিন্তু এই কলম কোন ব্র্যান্ডের, বাজার মূল্য কত বা এর কার্যকারিতা কী- তা খুঁজে পায় নি তদন্ত কমিটি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ‘হেকেপ’ (হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট) প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তবে এই প্রকল্পে গ্রন্থাগারের উন্নয়ন যতটা না হয়েছে, তার চেয়ে নিজের ভাগ্য সুপ্রসন্ন করেছেন তৎকালীন প্রশাসক অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদী।

ড. সামাদী গ্রন্থাগার উন্নয়নের নাম করে নিজের বিলাসিতার পরিচয় দিয়েছেন নানাভাবে। যার প্রমাণ মিলছে প্রকল্পের অর্থে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য দুটি কলম কেনার মধ্য দিয়ে। পাঁচ হাজার এবং ছয় হাজার করে মোট ১১ হাজার টাকা দিয়ে দুটি কলম কিনে দুর্নীতির নতুন রেকর্ড গড়েছেন বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উন্নয়ন প্রকল্পে শুধু কলম কেনার মধ্য দিয়ে নয়, পুরো অর্থ ব্যবহারেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে ড. সামাদীর বিরুদ্ধে ওঠা এসব অনিয়ম নিয়ে তদন্তও করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজানউদ্দিনের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তিন কোটি ২৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। মূলত বিশ্বব্যাংক ‘হেকেপ’ প্রকল্পের মাধ্যমে এ অর্থ সহায়তা দিয়েছিল। এ সময় গ্রন্থাগারে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদী।

HEQEP

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, ড. সামাদী দায়িত্ব পালনকালে গ্রন্থাগার কমিটির ছয়টি, গ্রন্থাগার উপ-কমিটির ১০টি এবং গ্রন্থাগারের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বিষয়ে ৫২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কোনো সভায় প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রেজুলেশনভুক্ত করা হয়নি। এসব সভার যথার্থতা, উপস্থিতি এবং ব্যয় নিয়েও নানা অসঙ্গতি উঠে এসেছে।

অভিযোগ উঠেছে, টেন্ডার আহ্বান নিয়েও। টেন্ডারের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে ড. সামাদীর কক্ষেই। নিজে ব্যবহারের জন্য প্রকল্পের এক লাখ ৪৫ হাজার টাকায় একটি ল্যাপটপ এবং ২২ হাজার টাকায় মাইক্রোসফট অফিস লাইসেন্স ক্রয় করেন, যা এখতিয়ারবহির্ভূত। প্রকল্পের টাকায় ট্রেনিংয়ের নামে ১২ লাখ টাকা খরচ করে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ভ্রমণ করেছেন চারজন। আরএফআইডি ট্যাগ কেনার নাম করে ২০ লাখ টাকা গায়েব করেছেন, যার কোনো হিসাব মিলছে না।

ড. সামাদী প্রকল্পের অর্থে পাঁচ হাজার এবং ছয় হাজার টাকা দিয়ে দুটি কলম কিনেছেন নিজের জন্য। কিন্তু সে কলম কোনো ব্র্যান্ডের অথবা এমন কলমের কার্যকারিতা কী, তারও কোনো তথ্য মেলেনি তদন্তে।

ডাটা এন্টি কাজের জন্য ৬৩ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করা হয় মাত্র ২১ লাখ টাকা। অথচ এটিই ছিল প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ খাত। অভিযোগ পাওয়া গেছে গ্রন্থাগারের দায়িত্বে বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায়ও।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিক্ষক ড. সামাদীর ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয় কিন্তু তিনি কল রিসিভ করেন নি।

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুস সোবহান এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রকল্পটির অর্থ বরাদ্দ ও ব্যয় আমার প্রশাসনের সময় হয়নি। এটি আগের প্রশাসনের সময়কার। এ প্রকল্পের অনিয়মের কথা জেনেছি। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


শর্টলিংকঃ