রাজশাহী রেশম কারখানায় চালু হচ্ছে আরও ৫ লুম


নিজস্ব প্রতিবেদক :

রেশম কারখানায় এখন পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি লুম চলছে। লুমগুলো এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ গজ কাপড় উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বলাকা, স্পান সিল্ক থান, কোরা বলাকা, গরদ কাপড় ও থান কাপড়। আরও ৫টি লুম চালুর উপযোগী করে তোলা হচ্ছে।  মাস খানেকের মধ্যেই এ কাজ সম্পন্ন হবে। তখন উৎপাদন আরও বাড়বে।


রাজশাহী রেশম কারখানায় আরও ৫টি লুম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দিন পড়ে থাকা লুমগুলো এখন ঘঁষে-মেজে চালুর উপযোগী করা হচ্ছে। এর আগে গেল বছর পরীক্ষামূলকভাবে কারখানার ৬টি লুম চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে কারখানার সব লুমই চালু করা হবে। বুধবার সকালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার রাজশাহী রেশম কারখানা পরিদর্শনে গেলে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম তাদের এ তথ্য জানান।

পরে সেখানে রেশম বোর্ড আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার যোগ দেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন রেশম বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আবদুল হাকিম। সভায় রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মনসুর আলম, রেশম বোর্ডের সদস্য নাছিমা খাতুন, এমএ হান্নান, সচিব জায়েদুল ইসলাম, প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় জানানো হয়, রেশম কারখানায় এখন পরীক্ষামূলকভাবে ৬টি লুম চলছে। লুমগুলো এ পর্যন্ত ২ হাজার ৬০০ গজ কাপড় উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বলাকা, স্পান সিল্ক থান, কোরা বলাকা, গরদ কাপড় ও থান কাপড়। আরও ৫টি লুম চালুর উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। আগামী মাস খানেকের মধ্যেই এই কাজ সম্পন্ন হবে। তখন উৎপাদন আরও বাড়বে।

রেশম বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত রেশম বোর্ডের নিজেদের উৎপাদিত গুটিতেই কারখানায় রেশম কাপড়ের উৎপাদন চলছে। তারা কারখানার সবগুলো লুমই চালু করতে চান। তবে এ জন্য আরও বেশি পরিমাণ রেশম গুটি প্রয়োজন। তাই তাদের গুটির উৎপাদন বাড়াতেও কাজ করতে হচ্ছে। যত বেশি কাঁচামাল উৎপাদন বাড়বে ততই বেশি সংখ্যক লুম চালু করা হবে।

এ ব্যাপারে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দিয়ে সভায় সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, রেশম রাজশাহীর ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে রেশম বোর্ডকে যেভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন তারা করবেন।

প্রসঙ্গত রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় এই রেশম কারখানা। রেশমের উন্নয়নে রাজশাহীতেই স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়।
কিন্তু এক কোটি ১৩ লাখ টাকা ঋণের বোঝা মাথায় রেখে ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। এতে বেকার হয়ে পড়েন কারখানার প্রায় ৩০০ জন শ্রমিক।

সে সময় অনেক আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি রাজশাহীবাসী। দীর্ঘ দিন পর রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেশম বোর্ডের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর কারখানাটি চালুর উদ্যোগ নেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় গেল বছরের ২৭ মে পরীক্ষামূলকভাবে কারখানার ৫টি লুম চালু করা হয়। পরে চালু হয় আরও একটি।

এখন আরও ৬টি লুম চালুর প্রক্রিয়া চলছে। বন্ধ ঘোষণার সময় কারখানায় মোট ৬৩টি লুম ছিল। এর মধ্যে উৎপাদন চলতো পুরনো ৩৫টি লুমে। নতুন ২৮টি লুম চালুর আগেই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের আগে কারখানাটি বছরে এক লাখ ৬ হাজার মিটার রেশম কাপড় উৎপাদন করতো। কারখানায় ৬৩টি লুম চালু করা গেলে বছরে কাপড় উৎপাদন হবে দুই লাখ ৮৭ হাজার মিটার। ধীরে ধীরে সব লুমই চালুর পরিকল্পনা আছে রেশম বোর্ডের।


শর্টলিংকঃ