রাজশাহী সীমান্তে ‘এসওপি’ লঙ্ঘনের দায় স্বীকার বিএসএফ ডিআইজির


বিশেষ প্রতিবেদক :
অবশেষে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস্-এসওপি লঙ্ঘনের দায় স্বীকার করলো ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। রাজশাহীর চারঘাট সীমান্তে আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করেছিল বিএসএফ সদস্যরা-এমন প্রমাণও মিলেছে। ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক ‘ডেকান ক্রনিকল’ (Deccan chronicle) পত্রিকা গত ১ডিসেম্বর এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

ওই খবরে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি কলকাতার বিএসএফ ক্যাম্প ঠাকুর ভিলায় ৫৫ তম বিএসএফ রাইজিং দিবস উদযাপনের সময় বক্তব্য রাখেন, বিএসএফের উপ-মহাপরিদর্শক (দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত সদর দফতর), এসএস গুলেরিয়া। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেও এসওপি লঙ্ঘন হয়েছে। বিষয়টি তদন্তেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসওপি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসওপি লঙ্ঘনের অভিযোগে এরইমধ্যে মুর্শিদাবাদের কাকমারি চরের বিএসএফের উপ-পরিদর্শকসহ তিন সদস্যের বিরুদ্ধে আদালত তদন্ত শুরু করেছে’।

এরআগে গত ১৭ অক্টোবর ভারতের সীমান্তরেখা অতিক্রম করে কয়েকজন জেলে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে। তারা রাজশাহীর চারঘাটের ভেতরে পদ্মানদীতে প্রবেশ করে ইলিশ মাছ শিকার করতে থাকে। ওই সময় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশ শিকারের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চলছিলো। মা ইলিশ শিকারের সময় ভ্রাম্যমান আদালত তিন জন জেলের মধ্যে একজন জেলেকে আটক করে।

সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ

এসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যরা কোনো ধরনের আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই বাংলাদেশের প্রায় ৬৫০ গজ অভ্যন্তরে এসে ওই জেলে প্রণব মন্ডলকে বিজিবির নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় বিজিবির সদস্যরা বাধা দিলে বিএসএফ সদস্যরা বিজিবিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এসময় বিজিবি পাল্টা গুলি চালালে বিএসএফের হেড কস্টেবল বিজয় ভান সিং নিহত এবং আরেক বিএসএফ সদস্য রাজবীর সিং আহত হন।

 

এদিকে, গত ১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের পত্রিকা ‘সংবাদ প্রতিদিন’ এর এক সংবাদে বলা হয়েছে, ‘গত অক্টোবরের মাঝামাঝি মুর্শিদাবাদের কয়েকজন মৎস্যজীবী মাছ ধরতে ধরতে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়েন। বিজিবি তাঁদের আটক করেন। একজন মৎস্যজীবীকে আটকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই দেশের ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের আয়োজন হয়। চার বিএসএফ কর্মী ও আধিকারিক এবং একজন এলাকার বাসিন্দা বৈঠক সেরে ফিরে আসার সময়ই তাঁদের উপর গুলি চালান বিজিবির এক হাবিলদার’। কিন্তু ‘পতাকা বৈঠক সেরে ফিরে আসার সময়ই বিএসএফের উপর গুলি চালানোর’ অভিযোগ আবারো অসত্য প্রমাণিত হলো বিএসএফের উপ-মহাপরিদর্শক (দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত সদর দফতর), এসএস গুলেরিয়ার স্বীকারোক্তিতে।

পদ্মা পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শাহরিয়ার খালে অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সদস্যরা। ডানপাশে বাংলাদেশের মৎস্য কর্মকর্তার প্রতিনিধি  -ফাইল ছবি
পদ্মা পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শাহরিয়ার খালে অনুপ্রবেশকারী বিএসএফ সদস্যরা। ডানপাশে বাংলাদেশের মৎস্য কর্মকর্তার প্রতিনিধি  -ফাইল ছবি

যদিও ওই ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি ১ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বিএসএফের বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ডেকে নিয়ে এসে কাছে আনার পর গুলি করে তাদের মেরে ফেলবো-একটা বাহিনীর সাথে সম্পর্ক অবনতি করবো-এমনটা হতে পারে না। আমরা একটা বাহিনীর সাথে সম্পর্ক অবনতি করার মত কোন ঘটনাও ঘটাই নি’।

এবার খোদ বিএসএফের ডিআইজি গুলেরিয়াও স্বীকার করলেন, বৈঠকের আগে বিএসএফ সদস্যরা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস্-এসওপি অনুসরণ করেনি। তাছাড়াও কয়েকটি ফেসবুক পেইজ এ রাজশাহী বিজিবি এর অধিনায়ক এর বিরুদ্ধে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট মার্শাল হওয়া এবং বদলী হবার যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা একেবারেই মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা।


শর্টলিংকঃ