রাণীনগরের সাব-রেজিস্ট্রার নিয়মিত অফিস না করায় চরম দূর্ভোগ !


রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি:

অফিস,চেয়ার টেবিল,সরকারি-বেসরকারি জনবল থাকলেও অফিস প্রধান নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার নিয়মিত অফিস না করায় সেবা গ্রহিতারা চরম দূর্ভোগে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান গত তিন মাসে ৬৫ কর্ম দিবসের মধ্যে অফিসে মাত্র ২৮দিন উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিতির দিন গুলোকে কাগজ কলমে পুরো কর্ম দিবস হিসেবে দেখিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব ডক্টর মো: ফজলে এলাহী ভুইয়া (রেজিঃ) স্বাক্ষরিত ২৯/০১/২০২০ ইং তারিখের আদেশ মোতবেক সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে গত ১০/০২/২০২০ ইং তারিখে রাণীনগর উপজেলায় চাকরিতে প্রথম পদায়নের পর থেকেই ফাঁকি দেওয়া শুরু করেছেন সাব-রেজিস্ট্রার। ভ’মি সংক্রান্ত মাঠ পর্যায়ের জন সেবা মূলক এই সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একদিকে সরকারি ও বে-সরকারী ভাবে নিয়োজিত প্রায় শতাধিক জনবল অলস সময় পার করছেন, অন্যদিকে সরকার রাজস্ব থেকে এবং জনগন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে বে-সরকারি কর্মচারীদের আয়-রোজগার না থাকায় সংসারে অভাব অনাটন দেখা দিচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১জন সাব-রেজিস্ট্রারসহ ৫জন সরকারী জনবল রয়েছেন। সমিতির তালিকা ভ’ক্ত দলিল লেখক প্রায় ৭০জন ও নকল নবিস রয়েছেন ২৬জন। ষ্ট্যাম ভেন্ডার রয়েছেন ৪জন। বছরে প্রায় পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার দলিল রেজিস্ট্রেশন হয়। জমির মিউটেশন, জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা, ব্যাংকিং কাজের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় তাৎক্ষণিক বা স্বল্প সময়ের মধ্যে সার্টিফাইড কপি (নকল) দরকার হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার যোগদানের পর থেকে নিয়মিত অফিস না করায় অচলাবস্থার কারণে জন সাধারনদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সরকারি আদেশ অনুযায়ী সপ্তাহে ৫কর্ম দিবস হলেও সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান সপ্তাহে ৩দিন (রবিবার, সোমবার ও মঙ্গলবার) অফিসে আসেন। কোন কোন সপ্তাহে ২দিনও আসেন। বাঁকি ২দিন বুধবার ও বৃহস্পতিবার অলিখিত ভাবে না আসায় অফিসের কার্যক্রম হয় না। সেক্ষেত্রে নিজের সুরক্ষার জন্য ছুটি, অফিসের কাজে নওগাঁ বা ট্রেনিং এর অযুহাত দেওয়া হয়। জরুরী ভিত্তিতে জমি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত জরুরি প্রয়োজন হলে তা কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। গত ৩মাসের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রার নভেম্বর মাসে ২২কর্ম দিবসের মধ্যে ৮দিন, ডিসেম্বর মাসে ২২কর্ম দিবসের মধ্যে ১০দিন, জানুয়ারি মাসে ২১কর্ম দিবসের মধ্যে ১০দিন অফিসে উপস্থিত ছিলেন। গত তিন মাসে ৬৫দিন কর্ম দিবসের মধ্যে মাত্র ২৮দিন কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আসা সেবাগ্রহিতাদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন অফিসে জমি ক্রয় কিংবা বিক্রয় করাসহ বিভিন্ন কাজে আসলে সাব-রেজিস্ট্রারকে পাওয়া যায় না। তিনি পুরো সময় অফিস না করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নোটিশ ঝুলিয়ে অফিসে থাকেন না। এতে করে আমরা পড়েছি চরম বেকায়দায়। একটি কাজের জন্য দিনের পর দিন অফিসে এসে ঘুরতে হচ্ছে।

রাণীনগর দলিল লেখক সমিতির সম্পাদক হারুনুর রশিদ বলেন যোগদানের প্রথম দিকে অনিয়মিত ভাবে অফিস করতেন মাহবুবুর রহমান। কিন্তু দলিল লেখকদের চাপে তিনি বর্তমানে অনেকটাই নিয়মিত অফিস করছেন। তিনি চলতি সপ্তাহে বিভাগীয় পরীক্ষার জন্য ঢাকায় থাকবেন। আগামী সপ্তাহে সম্ভবত অফিস শুরু করবেন।

উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে সাব-রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, নিয়মিত অফিস করি। চলতি সপ্তাহে বিভাগীয় পরীক্ষার জন্য ঢাকায় এসেছি। পরীক্ষার বিষয়টি জেলা রেজিস্ট্রার জানেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বিভাগীয় পরীক্ষা তাই জেলা রেজিস্ট্রারকে বিষয়টি জানায়নি।

জেলা রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম জানান ছুটির বিষয়ে মাহবুবুর রহমান আমাকে অবগত করেনি। তিনি নিয়মিত অফিস করেন কি করেন না এই বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। তবে বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখবো।


শর্টলিংকঃ