রাতের আঁধারে ‘ভূতের’ মতো দেখায় লেমুর


আফ্রিকান প্রাণী লেমুর। ল্যাটিন শব্দ lemurs থেকে লেমুর শব্দটির উৎপত্তি, যার অর্থ ভূতের মতো। রাতের আঁধারে লেমুরের মুখে আলো ফেললে অনেকটা ভূতের মতো দেখায় বলেই এর এমন নামকরণ করা হয়েছে।

প্রাকৃতিকভাবে লেমুর সাধারণত আফ্রিকার মাদাগাস্কারেই দেখা যায়। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে মাদাগাস্কারে আবির্ভূত হয়েছিল এই প্রাণীটি। তখন থেকেই লেমুরের বাস মাদাগাস্কারে। লেমুর হলো মাদাগাস্কারের প্রাইমেট গোত্রভুক্ত কিছু প্রাণীর সমষ্টিগত নাম।

আফ্রিকান এই প্রাণীর দেখা মিলছে এখন বাংলাদেশেও। দেশে একমাত্র গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে লেমুরের দেখা মেলে। যেহেতু এটি আফ্রিকান প্রাণী, তাই বাংলাদেশে এটি কখনও ছিল না। তবে চোরাকারবারিদের কল্যাণে এখন বাংলাদেশে ৪টি লেমুর রয়েছে। মাদাগাস্কারে প্রায় ১০০ প্রজাতির লেমুর দেখতে পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে ‘রিং টেইল্ড’ লেমুরের দেখা পাওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক সূত্রে জানা যায়, চোরাচালানের উদ্দেশ্যে রাখা দুইটি প্রাপ্তবয়ষ্ক লেমুর গত বছর নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। পরে লেমুর দুটিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হস্তান্তর করা হয়। এর ৪-৫ মাস পরই দুইটি বাচ্চা দেয় এই যুগল। যার একটি পুরুষ অন্যটি নারী। ফলে সাফারি পার্কে লেমুরের সংখ্যা এখন ৪টি।

প্রাণী বিশেষজ্ঞরা জানান, লেমুর ঋতু, স্থান ও লিঙ্গভেদে এদের সামাজিকতা রক্ষা করতে পারে। লেমুরের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে আচরণের অনেক পার্থক্য দেখা যায়। বড় আকারের লেমুররা সচরাচর দিনের বেলা ঘোরাফেরা করলেও ছোট আকারেরগুলো নিশাচর হয়। এদের মধ্যে সামাজিক ব্যাবস্থা, কার্যকলাপ, শিকার থেকে সুরক্ষিত থাকার কৌশল, প্রজনন এবং বুদ্ধিমত্তার পার্থক্যও দেখা যায়। দলবদ্ধভাবে থাকার পরও খাদ্য সংগ্রহের জন্য এরা একা বিচরণ করে এবং খাদ্যগ্রহণ শেষে দলে ফিরে আসে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পরিচালক ও সহকারী বন সংরক্ষক তাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, লেমুররা সব ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে। তবে সাফারি পার্কে এদেরকে বিভিন্ন ফল যেমন, আপেল, আঙ্গুর, কমলা ইত্যাদি দেয়া হয়।

তিনি আরও জানান, ছোট আকারের লেমুররা পতঙ্গ এবং ফল ফলাদি খেয়ে থাকে। ক্ষুধার্ত লেমুররা হজমযোগ্য প্রায় সবকিছুই খেতে পারে। লেমুররা সামাজিক প্রাণী এবং এরা দলগতভাবে বসবাস করে। একটি দলে সর্বোচ্চ ১৫টি লেমুর থাকতে পারে। দলবদ্ধভাবে থাকার পরও এদের সামাজিক অবস্থান অনেকটা স্বতন্ত্র। এরা জোড়ায় বা একাধিক পুরুষ বিশিষ্ট পরিবারেও থাকতে পারে। নিশাচর লেমুররা সচরাচর স্বতন্ত্রভাবে ঘোরাফেরা করলেও দিনের বেলা এরা দলের সঙ্গে যোগ দেয়।

বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান জাগো নিউজকে জানান, লেমুর আফ্রিকান প্রানী। আগে বাংলাদেশে কখনও এদের উপস্থিতি ছিল না। লেমুর সাধারণত শারীরিক সংকেত, ঘ্রাণ এবং বিভিন্ন প্রকার শব্দ উৎপন্ন করার মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। রিং টেইল্ড লেমুর গন্ধ শুকে এবং বিভিন্ন ধরনের শব্দ উৎপাদনের মাধ্যমে যোগাযোগ বজায় রাখে। এ প্রজাতির লেমুর হাই তুলে অন্য লেমুরকে হুমকি দিয়ে থাকে। গাছে গাছে বিচরণ করা এই প্রাণীর আচার-আচরণ অনেকটা বানরের মতো। এদের জীবনকাল সাধারণত ১৮ বছর পর্যন্ত।


শর্টলিংকঃ