রাবিতে গাছ কাটা প্রসঙ্গে যা বললেন উপ-উপাচার্য


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি কিছু গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে কেটে বিক্রি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ক্ষোভ জানিয়েছেন। তারা ফেসবকুসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

সেসব স্ট্যাটাসে প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে কড়া মন্তব্য করতে দেখা গেছে। সবশেষ গেল ১৫ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের সামনে কয়েকটি গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন।

এসব বিষয় প্রশাসনের কর্তাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর এ প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য জানিয়েছেন। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তিতে পাঠানো তাঁর বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো-

‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের সামনে তিনটি মৃতপ্রায় গাছ টিম্বার ভ্যালু এবং হলের সৌন্দর্য বিবেচনায় নিয়ে কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। এছাড়াও মন্নুজান হলের পাশে একটি পাইকর গাছও কাটার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। কারণ গাছটির শিকড় পার্শ্ববতী শেখ রাসেল মডেল স্কুলের বিল্ডিং ভেদ করে বিল্ডিংয়ের দেয়ালে ফাটল তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলো।

এছাড়াও গাছটির কিছু ডাল শেখ রাসেল মডেল স্কুলের টিনের চালের উপরে পড়ায় যেকোনো সময় চাল ভেঙ্গে কোমলমতি শিশুদের হতাহতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিলো। ইতোপূর্বে কয়েকজন অভিভাবকও গাছটি স্কুল ভবন এবং শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কাটার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

এ সকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মন্নুজান হল কর্তৃপক্ষ গাছগুলো কটিার উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছিলো। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে গাছ কাটা এবং বিক্রি সম্পর্কিত যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে গাছ কাটার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী পাইকর গাছটি কাটার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তি করায় গাছ কাটা স্থগিত করা হয়। একটা কথা এখানে উল্লেখ্য যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনোই অর্থনৈতিক মুল্য বিবেচনা করে গাছ কাটার উদ্যোগ নেয় না বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে বাধ্য হয়ে গাছ কাটতে হয়।

সকলের জ্ঞাতার্থে একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৮-২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে প্রায় ২৫০০ গাছ লাগানো হয়েছে। আমরা সবাই অবগত আছি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে কয়েক লক্ষ গাছ আছে।

এ গাছগুলোর মধ্যে কিছু কিছু গাছ ঝড়ে ভেঙ্গে পড়ে, বয়সের কারণে কিছু গাছ মারা যায় আবার কিছু গাছ এখানকার অধিবাসীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকী হলে কাটার উদ্যোগ নিতে হয়। কিন্তু যেকোনো কারণেই একটা গাছ কাটা হলে সেই স্থানে সাথে সাথে আরেকটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।

ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, রোকেয়া হলের পুকুরের পাশে, প্রশাসন ভবনের দু’পাশে এবং প্রথম বিজ্ঞান ভবন এবং প্যারিস রোডের দু’পাশে ফাঁকা স্থানে প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি সবুজ, জীববৈচিত্রে ভরপুর ক্যাম্পাস হিসাবে এর ঐতিহ্য ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করছে উল্লিখিত বক্তব্য গাছ কাটার ইস্যুকে কেন্দ্র করে যেকোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝির অবসান করবে।


শর্টলিংকঃ