রাবিতে থামছেই না গাছ কাটা, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা


রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বেশ কিছু পুরানো গাছ কাটায় শিক্ষার্থী ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ- ‘দীর্ঘদিন ধরে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলছে প্রশাসন। যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র নষ্ট করছে।’ প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণের চিন্তা-ভাবনাও করছেন।

রাবির মন্নুজান হলের সামনে গাছ কেটে ফেলা রাখা হয়েছে

তবে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের দাবি- ক্যাম্পাসের মৃতপ্রায় গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে বাধ্য হয়ে কাটতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের সামনে থেকে তিন/চারটি গাছ কাটা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। এর আগেও বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকা, চারুকলা এলাকাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে গাছ কাটার তীব্র সমালোচনা করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।

মন্নুজান হলের সামনের গাছ কাটার ঘটনা সেই ক্ষোভে নতুন করে ঘি ঢেলেছে। এ নিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন। কেউ কেউ আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহনে মতামত চেয়েও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

গাছ কাটা নিয়ে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামে একটি পেজে এক ছাত্রী লিখেছেন, ‘মন্নুজান হলের ঠিক সামনের রাস্তার গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু কেন? এই যে গরম কাল আসবে, রাজশাহীতে কি পরিমান গরম; তা বলার অপেক্ষাই রাখে না।’

‘এভাবে গাছ কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট করার পাশাপাশি স্টুডেন্টদের কষ্ট দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখছি না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের টাকার কি খুব দরকার?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক দিন ধরেই গাছ কাটার ঘটনা দেখে আসছি। মনে হচ্ছে প্রশাসন গাছ কেটে ক্যাম্পাস ফাঁকার করা দায়িত্ব নিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্যাম্পাসের যে ইউনিক সৌন্দর্য তা আর থাকবে না। পাশাপাশি পরিবেশের বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

তবে কেনো গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশাসনের অবস্থান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। রোববার এ প্রসঙ্গে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেছেন, মন্নুজান হলের সামনে টিম্বার ভ্যালু এবং হলের সৌন্দর্য বিবেচনায় তিনটি মৃতপ্রায় এবং স্কুল ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে একটি পাইকর গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কৃষি প্রকল্পের তত্ত্বাবধানে গাছ কাটা এবং বিক্রি সম্পর্কিত যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী পাইকর গাছটি কাটার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তি করায় গাছ কাটা স্থগিত করা হয়।

মৃতপ্রায় বলে দাবি করা হলেও এমন সতেজ গাছও কাটতে দেখা গেছে

উপ-উপাচার্য উল্লেখ করেন, ২০১৮-১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে প্রায় আড়াই হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। আমরা সবাই অবগত আছি, ক্যাম্পাসে কয়েক লক্ষ গাছ আছে। এ গাছগুলোর মধ্যে কিছু কিছু গাছ ঝড়ে ভেঙে পড়ে, বয়সের কারণে মারা যায়, আবার এখানকার অধিবাসীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হলে কাটার উদ্যোগ নিতে হয়।

তবে যে কোনো কারণেই একটা গাছ কাটা হলে সেখানে সাথে সাথে আরেকটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশা করছে, উল্লিখিত বক্তব্য গাছ কাটার ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝির অবসান করবে।


শর্টলিংকঃ