রাবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জোহা দিবস’ পালন


রাবি প্রতিনিধি:

যথাযোগ্য মর্যাাদায় দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. শামসুজ্জোহা’র ৫১ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জোহা দিবস দিবস পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবি করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

রাবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘জোহা দিবস’ পালন

দিবসটি উপলক্ষে ভোরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭টায় শহীদ ড. শামসুজ্জোহার সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, আবাসিক হল, ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংবাদিক সমিতিসহ সক্রিয় সংগঠনগুলো তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রভাতফেরি ও পুস্পস্তবক অর্পণ করে।

এদিকে জোহা দিবসকে ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ ঘোষণার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানবন্ধন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সংবাদ সম্মেলন, প্রথম আলো বন্ধুসভার গণস্বাক্ষরসহ নানা কর্মসূচি পালন করে।

মৃত্যুবার্ষিকীতে

সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের উদ্যোগে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা হিসেবে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার ও রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম সাইদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পর বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাপ হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। ছাত্রনেতা আসাদ ও জহুরুল হকের মৃত্যুর প্রতিবাদে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে শহরের দিকে অগ্রসর হয়।

তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তুললে তাদের উপর হামলা হয়। জোহা স্যার তখন ছাত্রদের রক্ষা করতে হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কে যে সম্প্রীতি, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিয়ে গেছেন ড. শামসুজ্জোহা। শিক্ষক হিসেবে জোহা স্যারকে আমাদের অনুসরণ করা উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘শহীদ ড. জোহা একজন নির্ভীক শিক্ষক ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে বলিষ্ঠ কণ্ঠে তিনি বলেছিলেন, কোনো ছাত্রের গায়ে গুলি লাগার আগে, যেন আমার গায়ে গুলি লাগে। তার আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আরও বেগবান হয়েছে। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।’

রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন হাওলাদারের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও চৌধুরী মো. জাকারিয়া, কোষাধ্যাক্ষ অধ্যাপক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বারী, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন খানি ও বিশেষ মোনাজাত এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে দোয়া মাহফিল ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন। শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

উল্লেখ্য, ড. সৈয়দ মুহম্মদ শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালনকালে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে স্বৈরাচার আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আক্রমণের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহীদ হন।


শর্টলিংকঃ