Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

রাবির ভিসি-প্রোভিসি ও রেজিস্ট্রারের দুর্নীতি প্রমাণিত


ইউএনভি ডেস্ক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীর বিরুদ্ধে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি, টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) তদন্ত করে এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। ইউজিসি গঠিত তদন্ত কমিটি ৩৬ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদন এবং আরও প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার সংযোজনী প্রতিবেদন গত মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা দিয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে ইউজিসি উপাচার্যের নিজের এবং তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের সম্পদ, আয়ের উৎস, ব্যাংক হিসাব এবং আয়-ব্যয়ের বিবরণী সরকারের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধানের জন্য সুপারিশ করেছে।

একই সঙ্গে ইউজিসির তদন্তে অসহযোগিতা করায় অবিলম্বে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

উপাচার্য ও একজন উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধে রাবির ৬২ শিক্ষক ও দুজন চাকরিপ্রার্থী যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং দুদকে লিখিত অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী রাবি সিন্ডিকেট সদস্য ড. দিল আফরোজ বেগমকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। সে কমিটি সম্প্রতি তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। গত মঙ্গলবার ও বুধবার সেই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ও বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ইউজিসি গঠিত তদন্ত দলের আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ডক্টর দিল আফরোজ বেগম।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ছাড়াও অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, সহযোগী অধ্যাপক গাজী তৌহিদুর রহমান, সহযোগী অধ্যাপক শিবলী ইসলাম ও সাখাওয়াত হোসেন টুটুলের সম্পদ অনুসন্ধানের জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, উপাচার্যসহ অন্যদের বিরুদ্ধে পঁচিশটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে উপাচার্য এম আবদুস সোবহান দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে ‘উপাচার্যের বাসভবনে’ ওঠার পর থেকে অধ্যাপক হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া ডুপ্লেক্স বাড়িটি কাগজে-কলমে ২০১৭ সালের ২৬ জুন ছেড়ে দিয়েছেন বলে দেখালেও প্রকৃতপক্ষে দেড় বছরের বেশি সময় যাবত মেরামতের নাম করে তার ব্যক্তিগত আসবাবপত্র ওই বাড়িতে রাখেন।

যে কারণে অন্য কোনো অধ্যাপককে ওই বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ওই অর্থ আদায়ের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রার্থীর সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সত্যতা পাওয়া গেছে। এছাড়া উপাচার্যও শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি করেছেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিকে (আচার্য) অসত্য তথ্য দিয়েছেন। সেই প্রমাণও পাওয়া গেছে। উপাচার্য শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা শিথিল করে নিজের মেয়ে এবং জামাতাকে নিয়োগ দিয়েছেন।

প্রতিবেদনে করা সুপারিশে তদন্ত কমিটি বলেছে, উপাচার্যের এ ধরনের কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাশীল পদের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তদন্ত কমিটি নৈতিকতাবিবর্জিত এ ধরনের কর্মকাণ্ড জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছে।

কমিটি ৩৪ জন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছে। অভিযুক্তরা তাদের থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ অবস্থায় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন নীতিমালা প্রবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। সূত্র: দেশ রুপান্তর


Exit mobile version