রাবি অধ্যাপক সোবহানের ভিসি হিসেবে নিয়োগের বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ


নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দ্বিতীয় দফায় নিয়োগ পাওয়া অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।  নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে উপাচার্যের পদ থেকে  অপসারণ করে তা জানাতে বলা হয়েছে। আজ বুধবার এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীর কানাইডাঙ্গা গ্রামের সালমান  ফিরোজ ফয়সালের পক্ষে আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম এই নোটিশ পাঠিয়েছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  অধ্যাপক আবদুস সোবহান, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, শিক্ষা সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সচিব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও  অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের নিজ বিভাগের (ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগ) সভাপতির কাছে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে বিকেলে ইউনিভার্সাল২৪নিউজ-কে জানিয়েছেন এডভোকেট মুজাহিদুল  ইসলাম।

আইনি নোটিসে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য  ২০১৭ সালের মে মাসের ৭ তারিখে  দ্বিতীয় মেয়াদে ৪ (চার) বছরের জন্য রাবি উপাচার্য হিসেবে আব্দুস সোবহানকে নিয়োগ প্রদান করেন। সেদিনই তিনি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

পরে উপাচার্য থেকে নিজস্ব বিভাগ ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে জুন মাসের ২১ তারিখে দুপুরে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করে। একইদিনে বিকালে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। এতে করে উপাচার্য পদে সাময়িক শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে রাষ্ট্রপতির বিনা অনুমতিতে একদিনের জন্য বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. আখতার ফারুককে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও নীতিবিরোধী।

আবার পুনরায় একই তারিখ বিকালে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। জুলাই মাসের ২৫ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটর অসাধারণ (এক্সটা অর্ডিনারী) সভায় জুন মাসের ২১ তারিখের স্বেচ্ছায় অবসর অনুমোদিত হয়। সিন্ডিকেটের উক্ত সভায় বেআইনিভাবে নিজে সভাপতিত্ব করেন।

আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ জুন মাসের ২৪ তারিখে এক পত্রের মারফতের রাষ্ট্রপতির কাছের আবেদন করেন তিনি ২৯ তারিখে অবসর গ্রহণ করবেন । মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেটা গ্রহণ করেন এবং অবসর পরবর্তী উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের অনুমতি প্রদান করেন। এর আগেই একই মাসের ২১ তারিখে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

কিন্তু তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে সত্য গোপণ রেখে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন। ডিসেম্বর মাসের ৩১ তারিখে সিন্ডিকেটের ৪৭৩ তম সভায় উপাচার্য নিজেই সভাপতিত্ব করে তার ভবিষ্য তহবিলের জমাকৃত অর্থ সুদসহ উত্তোলন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। উপাচার্য তার পেনশন ভাতার ৮০,৮৭,৮৬৯.০০ (আশি লক্ষ সাতাশি হাজার আটশত উনসত্তর টাকা) বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে  উত্তোলন করেন।

দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পরে হঠাৎ করে নিজ বিভাগ থেকে পদত্যাগের কারণ ছিল, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে জারীকৃত পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পাশ কাটিয়ে তার প্রাপ্য পেনশনের শতভাগ টাকা উত্তোলন করা।

উক্ত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১ জুলাই ২০১৭ তারিখ হতে পেনশনারগণ তাদের প্রাপ্য পেনশনের শতকরা ৫০ ভাগ বাধ্যতামূলক সমর্পণ করে অবশিষ্ট ৫০ ভাগের নির্ধারিত হারে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হবেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৭৩ ‘লঙ্ঘন করে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অসত্য তথ্য প্রদান করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা হারিয়েছেন। উপাচার্য এই আইনি নোটিস পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে পদত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আরিফুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। এ ব্যাপারে এখনো কোন আইনি নোটিস পাইনি।’

এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এম এ বারী’র সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 


শর্টলিংকঃ