রাবি শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম: পাল্টাপাল্টি অভিযোগ


রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের ঘটনায় একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছে। মঙ্গলবার (০৮অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হান্নান দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে গত ৩ অক্টোবর অধ্যাপক হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন চৌধুরী মো. জাকারিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক হান্নান বলেন, আমার বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। উপ-উপাচার্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। নিয়োগের আগে এই চাকুরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম। যা পরবর্তীতে নিয়োগ ভাইভার আগেই সেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে অধ্যাপক মো. আব্দুল হান্নান ধার হিসেবে নেওয়ার ও তা পরিশোধের ব্যাংক রিসিপ্ট, অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট এবং চাকুরিপ্রত্যাশী নুরুল হুদার সঙ্গে কথোপকথনের একটি রেকর্ডিং উপস্থাপন করেন।

অধ্যাপক হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাবি উপ-উপাচার্যের দেওয়া বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক হান্নান বলেন, ‘আমার একটি জমি বিক্রয়ের জন্য বায়নামা রেজিস্ট্রির জন্য দুই লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। গত বছরের ১ নভেম্বর আমি বিষয়টি নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। ওই সময় নুরুল হুদা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে। আমাদের মধ্যকার কথাবার্তা শুনে নুরুল হুদা আমার টাকার প্রয়োজনের বিষয়টি উপলব্ধি করে।

আমি তার (নুরুল হুদা) কাছে সপ্তাহ খানেকের জন্য দুই লাখ টাকা ধার হিসেবে দিতে পারবে কি না জানতে চাই। পরে ৪ নভেম্বর সে নীলফামারীর সৈয়দপুর শাখা ইসলামী ব্যাংক থেকে রাজশাহী শাখা ইসলামী ব্যাংকের ডিসেন্ট ট্রেডার্স’র একাউন্টে দুই লাখ টাকা পাঠায়। এরপর গত ১২ নভেম্বর আমি ব্যাংকের মাধ্যমেই নুরুল হুদাকে এই টাকা ফেরত দেই। অথচ বিভাগের চাকুরির নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছিল পরের দিন ১৩ নভেম্বর। ১৩ নভেম্বর নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন হলেও কে নিয়োগ পাচ্ছে তা সিন্ডিকেটে পাশ হয় ১৭ নভেম্বর।’

তিনি আরও বলেন, ‘টাকা নেওয়া ও তা পরিশোধের মধ্যবর্তী সময়ে গত ৯ নভেম্বর নুরুল হুদার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়। সেই ফোনালাপে নুরুল হুদা ধার হিসেবে আমাকে দেওয়া টাকাটা কবে ফেরত দেবো তা জানতে চায়।’

অধ্যাপক হান্নান বলেন, ‘ডিসেন্ট ট্রেডার্সের অ্যাকাউন্টটি একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট। প্রথমে অ্যাকাউন্টটি আমার নামে পরিচালিত হলেও পরবর্তীতে তা মো. শফিকুল ইসলাম ও আমার যৌথ নামে পরিচালিত হয়। অ্যাকাউন্টটি মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মীর্জাপুর এলাকায় আমাদের দুজনের নামে ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ ও অন্যান্য উৎস থেকে গৃহীত টাকা লেন-দেনের সুবিধার জন্য খোলা হয়েছিল।’

এর আগে চলতি বছরের ১ অক্টোবর চাকুরিপ্রত্যাশী নুরুল হুদার স্ত্রী সাদিয়ার সঙ্গে চৌধুরী মো. জাকারিয়ার মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি রেকর্ডিং ফাঁস হয়। কথোপকথনে সাদিয়া কত টাকা দেওয়ার জন্য রেডি আছে বলে জানতে চান চৌধুরী মো. জাকারিয়া। চাকুরির নিয়োগের কয়েকদিন আগের রেকর্ডিং এটি। রেকর্ডিংটি ফাঁস হওয়ার পর চৌধুরী মো. জাকারিয়া আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন এমন অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশও হয়।

পরবর্তীতে ৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে চৌধুরী মো. জাকারিয়া দাবি করেন, যে ফোনালাপ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হয়েছে তা একটি স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক আংশিকভাবে, খণ্ডিতভাবে, অসৎ উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। উল্টো তিনিই নিয়োগ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন। চৌধুরী মো. জাকারিয়া সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক হান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি ডিসেন্ট ট্রেডার্স’র নামে দুই লাখ টাকা জমার রিসিপ্ট, ছবি ও সহি-স্বাক্ষরসহ লিগ্যাল ব্যাংক ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেন।


শর্টলিংকঃ