Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তি


ইউএনভি ডেস্ক:

উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। রাজশাহী মহানগরীর প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও একই অবস্থা।


লকডাউন চলাকালে রাজশাহীর অধিকাংশ ডাক্তার চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দেন। এ অবস্থা এখন চলমান রয়েছে। ডাক্তার সংকটের কারণে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

রোববার সকালে রামেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে কয়েকজন রোগী দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের স্বজনরা হাসপাতালে ভর্তির জন্য টিকিট কাউন্টারে গেছেন।

কিন্তু দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকেও ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে না। কিন্তু কিছু করার নেই। শারীরিক অবস্থা খারাপ হলেও রোগী এবং তাদের স্বজনরা ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করে ওয়ার্ডে যাচ্ছেন।

জরুরি বিভাগের সামনে অবস্থানরত কয়েকজন রোগীর মধ্যে বাগমারা উপজেলার মোহনগঞ্জ এলাকার রোজী খাতুন (২৫) বলেন, ‘আমার পাঁচ বছরের শিশু সিয়াম রক্তশূন্যতায় ভুগছে। সকাল ৯টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছি। কিন্তু বেলা ১১টা পর্যন্ত ভর্তির প্রক্রিয়া শেষ করতে পারিনি। অবশেষে সাড়ে ১১টায় ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে।

কিন্তু হাসপাতালের বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে পরিপূর্ণ চিকিৎসা নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে রয়েছি। একই ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সেখানে উপস্থিত আরও কয়েকজন রোগী।’

এ ব্যাপারে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত (ইএমও) চিকিৎসক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই করোনা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসক এবং ওয়ার্ড বয়দের খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। তাই কিছুটা হলেও বিলম্ব ঘটছে। এ কারণে আমরা সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’

এদিকে করোনা আতঙ্কে এবং পরিপূর্ণভাবে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোও কার্যত রোগীশূন্য হয়ে পড়েছে। রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী হাসপাতালের ১৫টি ওয়ার্ড ঘুরে ধারণক্ষমতার মাত্র আংশিক রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া গেছে।এসব রোগীর অধিকাংশই এক সপ্তাহ বা তার আগে থেকে ভর্তি আছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাজার বেডের এ হাসপাতালে মাত্র ৫০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

জানা যায়, রামেক হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নেন প্রায় এক হাজার রোগী। কিন্তু রোববার সকালে সেখানেও রোগীর উপস্থিতি খুব কম পাওয়া গেছে। বহির্বিভাগের বিভিন্ন বিভাগে মাত্র ৫০-৫৫ জন রোগী অবস্থান করছিলেন। এদের মধ্যে একজন মহানগরীর মেহেরচণ্ডী এলাকার আকবর আলী বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে কান ব্যথায় প্রচণ্ড কষ্ট পাচ্ছি।এজন্য হাসপাতালে এসেছি। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছি।’

জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা চিকিৎসাসেবা দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। দুর্যোগকালীন সময় চলছে। তারপরেও আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক রয়েছেন। হয়ত কিছু ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরেও আমরা রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’

এদিকে রাজশাহীর বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও মিলছে না চিকিৎসাসেবা। শনিবার সন্ধ্যার পরে মহানগরীর লক্ষ্মীপুরে পপুলার রাজশাহী শাখায় দেখা যায়, প্রায় সব ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ। ভাঙা হাত নিয়ে সন্ধ্যায় ছেলে মনজুর রহমানকে সঙ্গে করে চিকিৎসার জন্য নাটোরের সিংড়া উপজেলা সদর থেকে এসেছিলেন আবদুর রহমান (৬৫)।

ভেবেছিলেন রাজশাহীর কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাবেন। কিন্তু পপুলার, রয়েল ও ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে অর্থপেডিকের কোনো ডাক্তার পাননি। তিনি বলেন, টয়লেটে পড়ে তার হাত ভেঙেছে। অপারেশনের প্রয়োজন হবে। ডাক্তার না পাওয়ায় তিনি রাতেই সিংড়ার উদ্দেশে রওনা দেন।

রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা রোগী দেখা হতো ও অপারেশন চলত। এখানেও ৪০ জন ডাক্তার রোগী দেখতেন। কিন্তু এখন এই হাসপাতালে খুব অল্প সংখ্যক ডাক্তার রোগী দেখছেন। এছাড়া অন্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতেও একই অবস্থা। চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলা শাখার সহসভাপতি ডা. ফয়সাল কবীর চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অনেক ডাক্তারই বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে আসতে অনীহা দেখাচ্ছেন। এর ফলে রোগীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন। তারপরেও আমরা চিকিৎসা কার্যক্রম সচল রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সুত্র – যুগান্তর


Exit mobile version