রামেক হাসপাতাল ঘিরে অবৈধ তামাকপণ্যের পসরা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

ধূমপানমুক্ত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ঘিরে অবৈধ তামাকপণ্যের দোকানের ছড়াছড়ি। বিকালের পর থেকেই হাসপাতাল চত্ত্বরে অস্থায়ী কিছু তামাকের দোকানের পসরা বসে। হাতের নাগালে থাকা এসব তামাকপণ্যের দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেই চলে দেদারছে ধূমপান।

পরোক্ষ ধূমপানের ফলে দূরদূরান্ত থেকে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী তাদের স্বজনদের প্রতিনিয়ত ঘটছে স্বাস্থ্যাহানি।

রামেক হাসপাতাল এলাকায় সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, পুরো হাসপাতাল ভবনের দেয়ালে দেয়ালে ধূমপানের কুফল ও ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে বেশকিছু সতর্কীকরণ সাইনেজ সাঁটানো রয়েছে। সতর্কীকরণ সাইনেজের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের অভ্যন্তরে কেউ যাতে ধূমপান না করে সেজন্য সার্বক্ষণিক মাইকিংও করছেন।

হাসপাতালের অভ্যন্তরে কেউ ধূমপান করলে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে বলেও মাইকে চাউর করা হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতাল এলাকায় ধূমপানের দৃশ্য পর্যবেক্ষণে মনে হয় যেন ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী’। ধূমপানের বিপক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্যসতর্কীকরণ বিভিন্ন সাইনেজ থাকার পরও হাসপাতাল এলাকায় তামাকপণ্যের অস্থায়ী বিভিন্ন দোকানের ছড়াছড়ি।

হাসপাতালের সামনের ফুটপাতে তামাকপণ্যের দোকান তো রয়েছেই এমনকি বিকালের পর থেকে এমার্জেন্সি বিভাগের সামনের গেট (২ নম্বর গেট) দিয়ে ঢুকতে হাতের দুইপাশে প্রতিনিয়ত স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে প্রায় ১৬-১৭টি তামাকপণ্যের দোকান বসে। এসব দোকান থেকে ধূমপায়ীরা সিগারেট নিয়ে সেখানেই বসে কিংবা দাঁড়িয়ে দেদারছে করছে ধূমপান।

এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অধূমপায়ী রোগী ও তাদের স্বজনরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা দানকারী সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরে ও আশেপাশে প্রতিনিয়ত ঘটছে স্বাস্থ্যহানি।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, পাবলিক প্লেসে ধূমপানকারীর শাস্তির বিধান থাকলেও প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। ফলে ধূমপায়ীদের ধূমপানের ধোঁয়ায় প্রতিনিয়ত ঘটটনায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

নওগাঁর সাপাহার থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা যতীন্দ্র বর্মন নামে রোগীর এক স্বজন বলেন, ‘আমি জরুরি বিভাগের সামনে দীর্ঘক্ষণ থেকে দাঁড়িয়ে আছি। দেখলাম, প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে ৪-৫ জন লোক জরুরি বিভাগের সামনে দেদারছে সিগারেট টানছে। অথচ সার্বক্ষণিক হাসপাতালে রোগীর যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে। ফলে সিগারেটের ধোঁয়ায় মুমূর্ষু অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, ‘এমার্জেন্সি বিভাগের সামনে তো প্রতিনিয়ত ধূমপান চলেই এমনকি হাসপাতালের ভেতরে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বারান্দায় রোগীর স্বজনরা রোগীর সামনেই ধূমচে সিগারেট টানে। এতে সিগারেটের ধোঁয়ায় রোগী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আব্দুল আওয়াল নামে এক রোগীর স্বজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটা সবাই জানে। কিন্তু হাসপাতালে এসেও সিগারেটে টান মারা থেকে ধূমপায়ীরা বিরত থাকতে পারে না। পাবলিক প্লেসে এভাবে ধূমপান করা দন্ডনীয় অপরাধ। অথচ পুলিশের সামনে দেদারছে ধূমপান করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

অনতিবিলম্বে হাসপাতাল চত্ত্বর ও এর আশেপাশে তামাকপণ্যের অবৈধ ব্যবসা বন্ধের দাবি জানিয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘হাসপাতাল চত্ত্বরে তামাকপণ্যের দোকান থাকায় ধূমপায়ীরা অনায়াসেই সিগারেট কিনে নিয়ে সেখানেই টানছে।

প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন আইন বহির্ভূত কার্যকলাপ হচ্ছে অথচ তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমি অনতিবিলম্বে জেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে জনস্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।’

রাজশাহীর সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আমির হোসেন বলেন, ‘হাসপাতাল চত্ত্বরে কিংবা এর আশেপাশে কেউ তামাক সেবন করে থাকলে তা মোটেও উচিত নয়। আমরা এ ব্যাপারে কর্র্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

রামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল জামিলুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের কাজই হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। পাবলিক প্লেসে ধূমপানে অবশ্যই ডিসকারেজ করা উচিত। কিন্তু হাসপাতালের আশেপাশে তামাকপণ্যের দোকান অপসারণ করা আমার দায়িত্ব না। কারণ এটা আমার আওতার বাইরে। তবে আমার সহযোগিতা থাকবে।’

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম আব্দুল কাদের বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হয়। কোথাও আইন ভঙ্গ হলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উল্লেখ্য, গ্লোবাল এডাল্ট টোবাকো সার্ভে (গ্যাট্স) ২০১৭ এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০১৫ দ্বারা হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন শতভাগ ধূমপানমুক্ত পাবলিক হিসেবে নির্ধারণ করার পরও বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে প্রায় ১৩ শতাংশ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার।

কাজেই রাজশাহীসহ দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে পরোক্ষ ধূমপানের এ হার শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি রাজশাহীবাসীর।


শর্টলিংকঃ