রেলওয়ের ৮৪ শতাংশ লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত


ইউএনভি ডেস্ক:

রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংগুলোর (বৈধ-অবৈধ) প্রায় ৮৪ শতাংশই অরক্ষিত। আর এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই ঝরছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। ২০০৮ থেকে ২০১৯-এই ১১ বছরে লেভেল ক্রসিংগুলোয় ৩১০টি দুর্ঘটনায় ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৯টি দুর্ঘটনায় ১৩ জন মারা গেছেন।

সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর যশোরের অভয়নগর এলাকায় একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু ক্রসিংগুলোয় দুর্ঘটনা বন্ধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এতে একদিকে ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত গতিতে চলতে পারছে না ট্রেন।

বিগত এক যুগে রেলওয়েতে ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও লেভেল ক্রসিংগুলো নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ক্রসিং উন্নয়নে গত ৬ বছরে মাত্র ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

যেখানে প্রয়োজন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। রেলওয়েতে মোট ক্রসিং ২ হাজার ৮৫৬টি। যার মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩৬১টির। ১ হাজার ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৩২টি গেটকিপার নেই। ৩৩টি ক্রসিং কে বা করা ব্যবহার করছে, তা কেউ জানে না।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অবৈধ ক্রসিংয়ের বেশির ভাগ তৈরি হয়েছে এলজিইডি, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তার কারণে।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে বলেন, অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে ট্রেন যথাযথ গতি নিয়ে চলতে পারছে না। এসব ক্রসিংয়ে ট্রেনযাত্রীসহ সাধারণ মানুষেরও প্রাণ যাচ্ছে। আর এসব ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানচালকসহ সাধারণ মানুষই। যেসব প্রতিষ্ঠান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করছে, দুর্ঘটনার জন্য তারাই দায়ী। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছে কীভাবে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। কীভাবে রেলপথকে নিরাপথ করা যায়। এখন যেসব নতুন রেলপথ করা হচ্ছে, সেগুলোয় লেভেল ক্রসিং এড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তাছাড়া বৈধ যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর মানোন্নয়ন নিশ্চিত করাসহ অবৈধ ক্রসিংগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. সুবক্তগীন জানান, বছরের পর বছর রেলে অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো মরণফাঁদ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এসব অবৈধ ক্রসিংয়ে উনিশ থেকে বিশ হলেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনায় শুধু প্রাণহানি নয়, রেলপথ ও ট্রেনেরও ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে।

পূর্বাঞ্চল রেলে মোট ১ হাজার ৩৭৭টি লেভেলক্রসিং রয়েছে, যার মধ্যে ৮১১টি অবৈধ। অবৈধ ক্রসিংয়ের জন্য ট্রেনের যথাযথ গতিও উঠানো সম্ভব হয়নি। কোনো কোনো এলাকায় ১ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যেই একাধিক অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে।

বৈধগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গেটম্যান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা ছাড়া অবৈধ ক্রসিংগুলো বন্ধও করা যাচ্ছে না। ফলে চরম ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন চালাতে হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটলে সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, পশ্চিমাঞ্চলে মোট ১ হাজার ৪৭৯টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০টি অবৈধ। শুধু অবৈধ ক্রসিংগুলোয়ই নয়, বিভিন্ন সময় বৈধ ক্রসিংগুলোয় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে।

কারণ বেপরোয়া যানচালকরা বৈধ ক্রসিংগুলোর সংকেত না মেনেই পার হওয়ার চেষ্টা করেন। আর এতেই ঘটে দুর্ঘটনা। প্রকৃত গতি নিয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না, এর অন্যতম কারণ হল অবৈধ লেভেল ক্রসিং।

ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি অবৈধ ক্রসিং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি অবৈধ ক্রসিংগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তা মন্ত্রণালয় দেখছে।


শর্টলিংকঃ