রোজায় ডায়াবেটিস রোগীরা কী করবেন?


জীবনযাপন ডেস্ক :

বছর ঘুরে আবারও এসেছে রমজান মাস। রোজা পালন বা সিয়াম সাধনা মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখতে তেমন কোন শারিরীক সমস্যা না থাকলেও যারা ডায়াবেটিস এর মতো রোগে আক্রান্ত তাদের বেশ কষ্টের মধ্য দিয়েই যেতে হয়।

এ রোগে আক্রান্তদের অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে। সারাদিনে কয়েকবার ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। এছাড়াও দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলেও বেশ কিছু শারিরীক সমস্যা দেখা দেয়।

তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস রোজা পালনের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা কমে আসবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন নিয়ম মানলে ডায়াবেটিস রোগেও রোজায় তেমন সমস্যা হবেনা।

ডায়াবেটিক পরীক্ষা :

চিকিৎসকদের পরামর্শ হলো রোজা শুরু হবার আগেই ডায়াবেটিক কোন পর্যায়ে আছে তা পরীক্ষা করে নিতে হবে। সে অনুযায়ী রোজার জন্য পরামর্শ দিতে পারবেন চিকিৎসকরা।

তাছাড়া ডায়াবেটিস কোন অবস্থায় আছে সে অনুযায়ী ওষুধ সেবন না করলে রোজা রাখতে গেলে বেশ ঝামেলাই পোহাতে হবে। সে জন্যই রোজা শুরুর আগে বা রোজার প্রথম দিকেই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ জরুরী।

হাইপোগ্লাইসেমিয়ার প্রস্তুতি :

গরমের এই সময়ে রোজা থাকতে হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা। এত দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকাটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ কষ্টের। এর ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক কমে যায়। যে কারণে অনেক জটিল সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় ডায়াবেটিস রোগীকে।

শরীরের এই ধরণের পরিস্থিতিতে পড়াকে বলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপো। এই সময় প্রচুর ঘাম হতে পারে। একই সাথে বুক ধড়ফড় করার ঘটনাও ঘটে। ঠিক এসব কারণেই ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখার ইচ্ছে থাকা স্বত্ত্বেও ঠিক মতো রোজা রাখতে পারেন না।

রোজা থাকা অবস্থায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সাথে সাথে মুখি মিষ্টি কিছু দিন। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এ অবস্থায় রোজা ভেঙে ফেলারই পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা এর ফলে মৃত্যু ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে সাথে মিষ্টি কিছু রাখতে যাতে এমন পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দেয়া যায়।

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন :

রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে সকাল আর রাতের খাবারের সময় পাল্টে নিতে হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধাপক ড. শারমিন রুমি আলীম জানান, “রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের ব্যাপারে কিছু সহজ পরামর্শ হলো, সকালের খাবারটি খেতে হবে সন্ধায়।

আর রাতের খাবার খেতে হবে সেহেরিতে। দুপুরের খাবার রাতে খেতে পারেন।“ বাংলাদেশে ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাওয়ার যে প্রচলন আছে তা স্বাস্থ্যের জন্য একেবারেই ক্ষতিকর। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এইসব খাবার বেশ অসুবিধায় ফেলে।

ডায়াবেটিস রোগীদের ইফতার আয়োজনে দই, চিড়া, রুটি সবজি এবং নানা রকম ফলমূল থাকতে হবে।

চিনির শরবত বাদ :

সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে তেষ্টা মেটাতে বেশিরভাগ মানুষ নানা রকম শরবত ও পানীয় পান করে থাকেন। পুষ্টিবিদদের মতে চিনি দিয়ে যেকোন ধরণের শরবত ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে।

তাই এইসব শরবত এড়িয়ে চলতে হবে। এর পরিবর্তে ডাবের পানি বা বিভিন্ন ফলের তৈরি শরবত পান করতে পারেন। ইফতার থেকে সেহেরির আগ নাগাদ বেশি করে পানি পান করতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ব্যায়াম :

অনেক ডায়াবেটিস রোগীই নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকেন। তবে রমজান মাসে তাদের অভ্যাসের কিছুটা রদবদল করতে হবে। অন্য সময় ব্যায়ামের পর তারা খাবার, পানি এবং ওষুধ গ্রহণ করে থাকেন রোজা রেখে সেটি সম্ভব না।

এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ হচ্ছে ইফতারের পর অথবা সেহেরির আগে ব্যায়ামের এই কাজটুকু সেরে নিতে পারেন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্তরা। তথ্যসূত্র : বিবিসি


শর্টলিংকঃ