Site icon ইউনিভার্সাল ২৪ নিউজ

র‌্যাব পরিচয়ে খুন-ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬


ইউএনভি ডেস্ক:

তেজগাঁও থানার একটি হত্যা মামলার তদন্তে ছয় জন গ্রেপ্তার হয়েছেন; যারা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয় দিয়ে খুন-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এরা হলেন- ফরহাদ হোসেন (৩৫), জালাল উদ্দিন সুমন (৩৫), কাজী মো. আকবর আলী (৪৫), সাহারুল ইসলাম সাগর (২১) ও আমিনুল ইসলাম সবুজ (৫০) ও মনির (২৫)।

তাদের কাছ থেকে র‌্যাব লেখা দুটি জ্যাকেট, একটি হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়্যারলেস সেট, একটি পিস্তল, পাঁচটি গুলি ও একটি খেলনা পিস্তল পাওয়া গেছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মশিউর রহমান জানান।

তিনি বলেন, আগের দিন নিখোঁজ তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা একটি বায়িং হাউজের কর্মকর্তা সুলতান হোসেনের (৩৫) মৃতদেহ গত ১৬ জুলাই মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরেরে একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুলাই তার ছোট ভাই আবুল হোসেন বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেন।

“মামলাটি থানা পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ১৩ অগাস্ট ফরহাদ হোসেনকে শরীয়তপুরের সখিপুরের সরকার গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

ডিসি মশিউর বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের অন্যান্য সহযোগীদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে শনিবার প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত অ্যাম্বুলেন্সসহ জালাল উদ্দিন সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে এই চক্রের হোতা আকবর আলী, সাহারুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলামকে পল্টন থানাধীন পুরানা পল্টন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মশিউর বলেন, এরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূয়া পরিচয় দানকারী একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্র। এরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার হুন্ডি ব্যবসায়ী, মানি একচেঞ্জার ও মতিঝিল এলার ব্যাংক হতে মোটা অংকের টাকা লেনদেনকারীদের টার্গেট করে।

“পরে তাদের অনুসরণ করে সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে হাত-পা বেঁধে মারধর করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে থাকা নগদ অর্থসহ যাবতীয় মালামাল ছিনিয়ে নেয়। চিৎকার শুরু করলে গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাদেরকে মেরে ফেলা হয়।”

যেভাবে তুলে নেওয়া হয় সুলতানকে

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সুলতানকে তুলে নেওয়ার বর্ণনা দিয়ে মশিউর বলেন, ১৪ জুলাই সুলতান মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জ অফিস থেকে ব্যাগ হাতে বের হলে সাগর ও সবুজ তাকে অনুসরণ করে। সুলতান পল্টন মোড় থেকে বিআরটিসি বাসে উঠলে সাগর ও সবুজ উক্ত বাসে উঠে তার পাশের সিটে বসে ও লোকটিকে অনুসরণ করতে থাকে এবং আকবরকে ফোন করে বলে বাসটি ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছে।

তখন ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সোহেলের মাধ্যমে ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্সসহ তাদের দলের আকবর, চালক সুমন, ফরহাদ, মনির উক্ত বাসটি অনুসরণ করে পেছনে পেছনে আসতে থাকেন। ফার্মগেটে বাস থেকে নেমে সুলতান মিরপুরগামী শিখর পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। সাগর ও সবুজও ওই বাসে উঠেন এবং সুলতানের আশপাশের সিটে বসেন।

ডিবির ডিসি মশিউর বলেন, এক পর্যায়ে সাগর ও সবুজ ফোনের মাধ্যমে আকবরকে জানান, লোকটির কাছে অনেক ডলার আছে, কাজটি করতে হবে।
“তখন আকবর মিরপুরগামী শেখর বাসটিকে অনুসরণ করতে থাকে। পল্লবীর পূরবী সিনেমা হলের একটু সামনে সুলতান বাস থেকে নেমে রাস্তা পার হওয়ার সময় সাগর ও সবুজ লোকটির পেছনে পেছনে নেমে ইশারায় মনির ও আকবরকে দেখিয়ে দেয়।

“আকবর, মনির, ফরহাদ নিজেদেরকে র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে সুলতানের শার্টের পেছনের কলার ধরে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসে। আকবরের হাতে ওয়ারলেস সেট, মনিরের গায়ে র‌্যাবের পোশাক, ফরহাদের গায়ে র‌্যাবের পোশাক এবং হাতে একটি হ্যান্ডকাফ ছিল। চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সে উঠার পর সুলতান বুঝতে পারেন তারা র‌্যাব সদস্য নয় তখন চিৎকার ও চেঁচামেচি শুরু করেন।”

তিনি বলেন, আকবর সুলতানের হাতে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ডলার না পেয়ে তা কোথায় জানতে চান। তখন সুলতান আবার চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে গামছা গলায় পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

“লাশ ও পুরো টিমসহ গাড়িটি গাবতলী-হেমায়েতপুর-সাভার হয়ে নবীনগর বাসস্ট্যান্ডে সবাই নেমে যায়। চালক সুমন একাই লাশটিকে নিয়ে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অদুরে রাস্তার পাশে জঙ্গলে ফেলে দেয়।”


Exit mobile version